ইরানের মুদ্রা, রিয়ালের (Rial) দর পতন অব্যাহত রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যেই এই দরপতন দেখা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজার সূত্রে খবর, বর্তমানে এক মার্কিন ডলারের (USD) বিনিময়ে ১০ লক্ষ ৪৩ হাজারের বেশি রিয়াল খরচ করতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে তেহরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এই চাপ আরও বেড়েছে।
সম্প্রতি, ফার্সি নববর্ষের (পার্সিয়ান নিউ ইয়ার) উৎসবের সময় মুদ্রার বিনিময় হার আরও কমে গিয়েছিল। দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাস্তার আশেপাশে কিছু অসংগঠিত ব্যবসা চললেও বাজারে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সম্প্রতি বলেছেন, তাঁর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। তবে, দেশটির পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত সরাসরি আলোচনার বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।
প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান আরও বলেন, “আজ, আমেরিকা শুধু ইরানকে নয়, বিশ্বকেও অপমান করছে।” তিনি সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কিছু নীতির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, যার মধ্যে আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ অন্যতম।
পশ্চিমের দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। যদিও তেহরান এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং তাদের পরমাণু কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করে।
২০১৫ সালে, ইরান জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলো – যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা।
কিন্তু ২০১৮ সালে, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন এবং ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান তাদের চুক্তির কিছু শর্ত কমিয়ে দেয় এবং পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করে।
সোমবার, ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা আলী লারিজানি সতর্ক করে বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনও ইচ্ছা রাখে না, তবে দেশের উপর কোনো আক্রমণ হলে তাদের “অন্য কোনো উপায় থাকবে না”।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই অর্থনৈতিক সংকট এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা