বিশ্বজুড়ে ‘ম্যাচা’র চাহিদা বাড়ছে, জাপানে সংকট-এর আশঙ্কা। সবুজ রঙের মিহি গুঁড়ো, যা জাপানি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, এখন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
এই ‘ম্যাচা’ (Matcha), যা আসলে এক প্রকারের বিশেষ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি করা সবুজ চা-পাতা, বর্তমানে খাদ্য ও পানীয়ের জগতে এক নতুন উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে। ল্যাট থেকে শুরু করে চকলেট, আইসক্রিম থেকে মিষ্টি—সবকিছুতেই ম্যাচার ব্যবহার চোখে পড়ছে।
তবে এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে, ম্যাচার উৎপত্তিস্থল জাপানে দেখা দিয়েছে সরবরাহ সংকট। জাপানের কিয়োটোর কাছাকাছি অবস্থিত উজি শহর, যা ঐতিহ্যগতভাবে ম্যাচা ব্যবসার কেন্দ্র, এই মুহূর্তে পর্যটকদের এক গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য।
পর্যটকদের এই আগ্রহের মূল কারণ হলো ম্যাচা। এখানকার রেস্তোরাঁগুলোতে ম্যাচা-স্বাদযুক্ত খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে, যেমন ম্যাচা-মিশ্রিত ড্রেসিং সহ গিওজা এবং তাকোয়াকি, এছাড়াও স্ট্যামিনা রামেন-এর মতো বিভিন্ন পদ।
পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার স্থানীয় দোকানগুলোতেও ম্যাচা-সংক্রান্ত পণ্যের বিক্রি বেড়েছে। চাজুনা নামের একটি পার্কে ম্যাচা তৈরির কর্মশালাগুলোতেও উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তবে, ম্যাচার এই বিশ্বব্যাপী চাহিদা একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর, সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে জাপানের চা কোম্পানিগুলোকে ম্যাচা কেনার পরিমাণে সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে হয়েছে।
ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার বাজারে ম্যাচার চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ছে। যদিও জাপানে সাধারণ চা-পাতার ব্যবহার কমছে, বাইরের দেশগুলোতে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালে ম্যাচার বিশ্ববাজারের মূল্য ছিল প্রায় ২৮০ কোটি মার্কিন ডলার, যা ২০২৮ সাল নাগাদ প্রায় ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। জাপান সরকারও এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তারা চা উৎপাদনকারীদের উৎসাহিত করতে ভর্তুকি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যাতে তারা ঐতিহ্যবাহী ‘সেনচা’ (Sencha)-এর পরিবর্তে ‘তেনচা’ (Tencha) উৎপাদন করেন, যা ম্যাচা তৈরির মূল উপাদান। সরকারি প্রচারণার ফলে ম্যাচার জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ম্যাচার আবেদন আরও বেড়েছে। স্বাস্থ্যকর উপাদান এবং কফির থেকে কম ক্যাফিন থাকার কারণে অনেকেই নিয়মিত ম্যাচা পান করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
যদিও ম্যাচার এই চাহিদা অনেকের কাছেই আনন্দের, তবে এর ফলে জাপানে সরবরাহ সংকট দেখা দেওয়ায় অনেক চা প্রেমী চিন্তিত। তবে জাপানের এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, একটি পণ্যের চাহিদা কীভাবে একটি অঞ্চলের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
ভবিষ্যতে ম্যাচার সরবরাহ পরিস্থিতি কেমন থাকে, এখন সেটাই দেখার বিষয়। তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান