মালদ্বীপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা যাত্রীদের জন্য নতুন এক বিলাসবহুল বিমান সংস্থা হলো বিওন্ড। এই এয়ারলাইনটি একটি নতুন ধারণা নিয়ে এসেছে – সম্পূর্ণ বিজনেস ক্লাসের বিমান পরিষেবা, যা প্রাইভেট জেটের মতো অভিজ্ঞতা দিতে প্রস্তুত।
সম্প্রতি চালু হওয়া এই এয়ারলাইনের পরিষেবা কেমন, তা নিয়ে আমাদের আজকের প্রতিবেদন।
বিওন্ড এয়ারলাইন্স: নতুন দিগন্তের সূচনা
বিগত বছরগুলোতে বিমানের টিকিট এবং যাত্রী সেবার মান নিয়ে অনেক অভিযোগ শোনা গেছে। সেই প্রেক্ষাপটে, বিওন্ড এয়ারলাইন্স তাদের যাত্রা শুরু করেছে, যেখানে যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক এবং বিশেষ অভিজ্ঞতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
তারা মূলত মালদ্বীপ থেকে দুবাই, জুরিখ, মিউনিখ, মিলান এবং রিয়াদে তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
২০২৮ সালের মধ্যে তাদের বহরে আরও ২৫টি বিমান যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যার মাধ্যমে ৪৯টি গন্তব্যে পরিষেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্য তাদের।
খরচ এবং সুবিধা
বিওন্ড এয়ারলাইন্সের টিকিটের দাম শুরু হচ্ছে প্রায় ৩,০০০ মার্কিন ডলার থেকে, যা বাংলাদেশি টাকায় (১ ডলার = ১১০ টাকা ধরে) প্রায় ৩,৩০,০০০ টাকার মতো।
যদিও এটি প্রথম শ্রেণির টিকিটের চেয়ে কম, তবে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের বিজনেস ক্লাসের টিকিটের তুলনায় কিছুটা বেশি।
উদাহরণস্বরূপ, এমিরেটসের বিজনেস ক্লাসে দুবাই-মালে রুটের টিকিটের দাম ২,০০০ থেকে ৩,৫০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে, যেখানে প্রথম শ্রেণির টিকিটের দাম শুরু হয় ৬,০০০ ডলার থেকে।
তবে প্রশ্ন হলো, এই মূল্যের বিনিময়ে বিওন্ড কতটা সুবিধা দিতে পারে?
ভিসা ও বোর্ডিং প্রক্রিয়া
দুবাইয়ের আল মাকতুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিওন্ডের চেক-ইন প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ ছিল।
বিমানবন্দরের কর্মীরা বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে যাত্রীদের সহযোগিতা করেন।
যারা বেশি ওজনের (৪০ কেজি পর্যন্ত) লাগেজ নিতে চান, তাদের জন্য ‘ব্লিস’ ভাড়া বিদ্যমান।
এছাড়া, যারা আরও বেশি সুবিধা চান, তারা ‘ওপুলেন্স’ ভাড়া বেছে নিতে পারেন, যেখানে ৬০ কেজি পর্যন্ত ওজনের লাগেজ বহনের সুযোগ রয়েছে।
নিরাপত্তা এবং ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াও দ্রুত সম্পন্ন করা গেছে।
বিমানের অভ্যন্তরে
বিওন্ড এয়ারলাইন্সের এ৩১৯ বিমানটি বিশেষভাবে সজ্জিত করা হয়েছে।
ইতালীয় ডিজাইনার পোলোট্রোনা ফ্রাউ এর ডিজাইন করেছেন।
বিমানের অভ্যন্তরে চামড়ার সিট, আরামদায়ক বালিশ এবং ব্রোঞ্জ রঙের ছোঁয়া একে একটি আভিজাত্যপূর্ণ রূপ দিয়েছে।
প্রত্যেকটি আসনে পাওয়ার সকেট এবং ইউএসবি চার্জিং পোর্ট রয়েছে।
সিটগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা একজন যাত্রীকে ব্যক্তিগত স্থান ও আরামের অনুভূতি দেয়।
খাবার এবং পানীয়
বিওন্ডের খাদ্য তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার।
হালকা ও স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি, এখানে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের পানীয়।
মেন্যুতে তাজা ফল ও সবজির রস, কফি এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিনোদন ব্যবস্থা
যদিও বিওন্ড এয়ারলাইন্সে ওয়াইফাই ব্যবহারের সুযোগ নেই, তবে প্রতিটি যাত্রীর জন্য একটি করে আইপ্যাড সরবরাহ করা হয়, যেখানে সিনেমা, টিভি শো, তথ্যচিত্র এবং গান উপভোগ করার ব্যবস্থা রয়েছে।
বিওন্ডের ভবিষ্যৎ
বিওন্ড এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তেরো টাসকিলা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে তারা দুবাইতে নিজস্ব লাউঞ্জ তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন।
এছাড়া মালদ্বীপে একটি বিশেষ স্থান তৈরি করারও তাদের পরিকল্পনা রয়েছে।
সবশেষে, বিওন্ড এয়ারলাইন্স একটি নতুন ধারণা নিয়ে এসেছে, যা সম্ভবত ভ্রমণকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে।
যারা একটি ব্যক্তিগত এবং আরামদায়ক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা চান, তাদের জন্য এই এয়ারলাইন্সটি একটি ভালো পছন্দ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার