শিরোনাম: ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ: মায়ামির ‘ছোট ভেনেজুয়েলা’য় অভিবাসন নিয়ে উদ্বেগ
ফ্লোরিডার ডোর্যালে, যা ‘ছোট ভেনেজুয়েলা’ নামে পরিচিত, সেখানে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের মধ্যে এখন চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিষয়ক নীতিতে পরিবর্তনের কারণে তারা তাদের আইনি অধিকার হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষ করে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের কারণে সেখানকার ভেনেজুয়েলার নাগরিকেরা গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
২০০৭ সালে ভেনেজুয়েলা থেকে আসা উইলমার এসকারাইয়ের কথা ধরুন।
তিনি মায়ামি ডে কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ২০১৩ সালে প্রথম একটি রেস্টুরেন্ট খোলেন। বর্তমানে তার অধীনে এক ডজনের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে তিনি ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের কাজ দেন।
এই শ্রমিকদের অনেকেই এখন তাদের বিতাড়িত হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।
ফেব্রুয়ারী মাস থেকে ট্রাম্প প্রশাসন দুটি ফেডারেল প্রোগ্রাম বন্ধ করে দিয়েছে।
এই প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে সাত লক্ষাধিক ভেনেজুয়েলার নাগরিক এবং আরো কয়েক লক্ষ কিউবান, হাইতিয়ান ও নিকারাগুয়ান নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাস ও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছিলেন।
ডোর্যালে বসবাসকারী ভেনেজুয়েলার বৃহত্তম কমিউনিটিতে এখন সবাই এই বিষয় নিয়েই আলোচনা করছে।
সেখানকার মানুষেরা আশঙ্কা করছেন, সরকারের বিরুদ্ধে আনা মামলাগুলো যদি ব্যর্থ হয়, তবে তাদের জীবনে নেমে আসবে চরম বিপর্যয়।
যারা তাদের সুরক্ষা হারাবেন, তাদের হয় অবৈধভাবে বসবাস করতে হবে, নয়তো ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দেশে ফিরতে হবে।
এসকারাই মনে করেন, “এই মানুষগুলোর কর্মদক্ষতা হারানোর বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। কারণ, এখানে এমন কিছু কাজ আছে যা এখানকার অন্য কেউ করতে চায় না।”
ডোরালের প্রধান সড়কগুলোতে ইংরেজি ভাষার চেয়ে স্প্যানিশ ভাষার ব্যবহার বেশি দেখা যায়।
এখানে আসা ভেনেজুয়েলার নাগরিকেরা তাদের দেশকে যেন নতুন করে খুঁজে পান, কিন্তু একইসঙ্গে নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের অনুভূতিও উপভোগ করেন।
রাস্তার পাশে অনেক দোকানে ফ্ল্যাট আকারের ‘আরেপাস’ (ভুট্টার আটা দিয়ে তৈরি রুটি) বিক্রি হয়, যা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অংশ।
গ্যাস স্টেশনের দোকানগুলোতে আরেপাস তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় আটা ও সাদা পনির পাওয়া যায়, এছাড়াও ভেনেজুয়েলার পতাকার রঙে রাঙানো টি-শার্ট ও টুপিও বিক্রি হয়।
জন নামের এক ব্যক্তি নয় বছর আগে ভেনেজুয়েলা থেকে এসে এখানে একটি নির্মাণ সংস্থা কিনেছেন।
তিনি ও তার স্ত্রী বর্তমানে ‘টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্ট্যাটাস’ (টিপিএস)-এর সুবিধা ভোগ করছেন।
এই প্রোগ্রামটি ১৯৯০ সালে কংগ্রেসে তৈরি করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা গৃহযুদ্ধের কারণে যেসব দেশের মানুষেরা নিজেদের দেশে ফিরতে পারছেন না, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ দেওয়া হয়।
টিপিএস পাওয়া ব্যক্তিরা এখানে কাজ করতে পারেন, তবে এর মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
জনের পাঁচ বছর বয়সী কন্যা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
জন তার আসল পরিচয় প্রকাশ করতে চান না, কারণ তিনি বিতাড়িত হওয়ার ভয়ে আছেন।
জনের স্ত্রী তাদের নির্মাণ ব্যবসায় প্রশাসনিক সহায়তা করেন এবং একইসঙ্গে রিয়েল এস্টেট ব্রোকারের কাজও করেন।
তাদের মেয়েকে তারা জানিয়েছেন যে, হয়তো তাদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হতে পারে।
তাদের জন্য ভেনেজুয়েলা ফেরার কোনো সুযোগ নেই।
জন বলেন, “সরকার আমাদের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না, এটা আমাদের কষ্ট দেয়।
আমরা তো কোনো অপরাধ করতে আসিনি, এসেছি কাজ করতে, নিজেদের জীবন গড়তে।
আদালতের এক নির্দেশে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত টিপিএস বহাল রাখার কথা বলা হয়েছে।
এর ফলে অন্ততপক্ষে সাড়ে তিন লক্ষ ভেনেজুয়েলার নাগরিককে তাৎক্ষণিকভাবে অবৈধ হওয়া থেকে রক্ষা করা গেছে।
রেস্টুরেন্ট মালিক এসকারাই জানিয়েছেন, তার ১৫0 জন কর্মীর প্রায় সবাই ভেনেজুয়েলার নাগরিক এবং তাদের মধ্যে ১০০ জনের বেশি টিপিএস-এর সুবিধাভোগী।
যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করা এবং বসবাস করার সুযোগ সৃষ্টিকারী ফেডারেল ইমিগ্রেশন প্রোগ্রাম, যা পাঁচ লক্ষাধিক কিউবান, ভেনেজুয়েলার, হাইতিয়ান এবং নিকারাগুয়ান নাগরিকদের সুবিধা দিত, তা আগামী ২৪শে এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা ছিল।
তবে আদালতের হস্তক্ষেপে এর ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টিপিএস এবং অন্যান্য সাময়িক সুরক্ষা ব্যাপকভাবে প্রসারিত করেছিলেন, যার ফলে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের সুবিধা হয়েছিল।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে এবং বর্তমানেও এই সুবিধাগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করছেন।
তবে, অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিপাবলিকানদের মধ্যে তেমন কোনো রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
ফ্লোরিডার তিনজন কিউবান-আমেরিকান প্রতিনিধি, মারিও ডিয়াজ-বালাআর্ট, কার্লোস গিমেনেজ এবং মারিয়া এলভিরা সালাজার, affected হওয়া ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের বিতাড়ন না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা সরকারের কাছে আবেদন করেছেন, যাদের কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই, তাদের বিতাড়ন করা থেকে বিরত থাকতে এবং টিপিএস সুবিধাভোগীদের বিষয়টি আলাদাভাবে বিবেচনা করতে।
ডোরালের মেয়র, যিনি ২০১৬ সাল থেকে একটি ট্রাম্প গল্ফ ক্লাবের মালিক, তিনিও প্রেসিডেন্টকে চিঠি লিখে আবেদন করেছেন, যাতে কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই এমন ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের জন্য একটি আইনি পথ খুঁজে বের করা হয়।
ডোরালে আসা অভিবাসীদের মধ্যে উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীরা ছিলেন, যারা এখানে সম্পত্তি ও ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেছেন।
তাদের পরে আসেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিম্ন আয়ের অনেক ভেনেজুয়েলার নাগরিক এখানে সেবা খাতে কাজ করার জন্য এসেছেন।
তারা ডাক্তার, আইনজীবী, বিউটিশিয়ান, নির্মাণ শ্রমিক এবং গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন।
তাদের মধ্যে কেউ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেয়েছেন, আবার কেউ অবৈধভাবে বসবাস করছেন এবং তাদের সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
অনেকে আবার টুরিস্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও এখানে থাকছেন, আশ্রয় প্রার্থনা করছেন বা কোনো না কোনো সাময়িক স্ট্যাটাসের সুবিধা ভোগ করছেন।
ভেনেজুয়েলার আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট এবং ডোরালের বাসিন্দা ফ্রাঙ্ক কারেনো বলেন, “এখন একটা অনিশ্চয়তা কাজ করছে।
মানুষজন হয়তো ভেনেজুয়েলা ফিরতে চায় না বা ফিরতে পারছে না।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস