ইউরোপের প্রথম গবেষণা কেন্দ্র, আটলান্টিক নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টিবন নিয়ে কাজ শুরু।
কর্নেওয়ালের একটি প্রাচীন বনের পাশে তৈরি হতে যাচ্ছে ইউরোপের প্রথম গবেষণা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রটি আটলান্টিক নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টিবন নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হচ্ছে।
‘দ্য থাউজেন্ড ইয়ার ট্রাস্ট’ নামক একটি সংস্থা এই প্রকল্পের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে। প্রাথমিকভাবে, এই কেন্দ্র নির্মাণের জন্য তারা ৭৫ লক্ষ পাউন্ড সংগ্রহ করার লক্ষ্য নিয়েছে।
এই গবেষণা কেন্দ্রটি তৈরি করা হবে ইংল্যান্ডের একটি পুরনো খামার ‘ক্যাবিলা’-য়, যা বর্তমানে একটি বিশ্রাম কেন্দ্র এবং বনাঞ্চল পুনরুদ্ধার প্রকল্পের অংশ। বডমিন মুর-এ অবস্থিত এই স্থানটি নাতিশীতোষ্ণ বনের গবেষণা এবং অধ্যয়নের জন্য উপযুক্ত।
আটলান্টিক নাতিশীতোষ্ণ বনগুলি মূলত ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলে, যেমন নরওয়ের বার্গেন থেকে পর্তুগালের ব্রাগা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বনগুলোতে বিশেষ ধরনের শৈবাল, ফার্ন এবং নানা ধরনের লতাগুল্ম দেখা যায়।
সাধারণত, নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টিবনগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্বন ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। একসময় স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এই বন ছিল, কিন্তু বর্তমানে তা ক্ষুদ্র অংশে পরিণত হয়েছে।
সারা বিশ্বে, এই ধরনের বনভূমির পরিমাণ খুবই কম, যা পৃথিবীর স্থলভাগের ১ শতাংশেরও কম।
এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা, মার্লিন হ্যানবেরি-টেনিছন জানান, “আমরা সবাই গ্রীষ্মমন্ডলীয় বৃষ্টিবন সম্পর্কে জানি, কারণ সেগুলোর উপর অনেক গবেষণা হয়েছে। কিন্তু নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টিবন সম্পর্কে আমাদের ধারণা কম।
এই বনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং এর সংরক্ষণে বিজ্ঞানীদের আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার।”
গবেষণা কেন্দ্রটিতে ছাত্র, শিক্ষক এবং গবেষকদের জন্য আবাসন, পরীক্ষাগার, ক্যান্টিন এবং আলোচনা সভার জন্য একটি ছোট প্রেক্ষাগৃহ থাকবে। মার্লিন হ্যানবেরি-টেনিছন আরও জানান, ক্যাবিলা এই গবেষণা কেন্দ্রের জন্য আদর্শ স্থান, কারণ এটি আটলান্টিক নাতিশীতোষ্ণ বনের জলবায়ু অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
অর্থ সংগ্রহের জন্য ‘দ্য থাউজেন্ড ইয়ার ট্রাস্ট’ অন্যান্য দাতব্য সংস্থা, সরকার এবং বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করছে। মার্লিনের বাবা, বিখ্যাত অভিযাত্রী রবিন হ্যানবেরি-টেনিছনও এই কাজে সাহায্য করছেন।
তিনি তাঁর ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন, যার মাধ্যমে এই গবেষণা কেন্দ্রের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হবে।
মার্লিন মনে করেন, “আমরা যদি আটলান্টিক নাতিশীতোষ্ণ বনকে ভালোবাসি এবং এর গুরুত্ব বুঝি, তবেই এটিকে রক্ষা করতে পারব। আর বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা এই উপলব্ধিতে সাহায্য করবে।”
তাঁর আশা, আগামী ১০ বছরের মধ্যে, ব্রিটেনের মানুষ এবং শিক্ষাব্যবস্থা জানতে পারবে যে, তাঁরাও একটি বৃষ্টিবনের বাসিন্দা, যেমনটা ব্রাজিলের মানুষ তাদের বনের জন্য গর্বিত।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান