জার্মান ধর্মযাজক ডিয়েট্রিখ বনহোফার, যিনি হিটলারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার দায়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁর জীবন ও কর্ম আজও সারা বিশ্বে আলোচনার বিষয়। সম্প্রতি, তাঁর আদর্শকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
নাৎসিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রাম এবং ধর্ম ও রাজনীতির জটিল সম্পর্ক নিয়ে বহু মানুষ আজও আগ্রহী।
বনহোফার ছিলেন একজন প্রতিবাদী ধর্মতাত্ত্বিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি হিটলারের নাৎসিবাদকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।
তাঁর সাহসীকতা এবং নৈতিক দৃঢ়তা আজও মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। ১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসে, যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে তাঁকে হত্যা করা হয়।
কিন্তু সম্প্রতি, বনহোফারের আদর্শকে কেন্দ্র করে নতুন একটি বিতর্ক শুরু হয়েছে। রক্ষণশীল কিছু গোষ্ঠী, বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদীরা, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে বনহোফারের ভাবমূর্তি ব্যবহারের চেষ্টা করছেন।
তাঁরা প্রচার করছেন যে বনহোফার ছিলেন একজন “ধর্মীয় যোদ্ধা”।
এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, বনহোফারের জীবন ও আদর্শকে বিকৃত করা হচ্ছে। তারা মনে করেন, শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদীরা তাঁদের বিদ্বেষপূর্ণ এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বনহোফারের খ্যাতি ব্যবহার করতে চাইছে।
এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এর মাধ্যমে ঘৃণা ও সহিংসতার বিস্তার হতে পারে।
বনহোফারের জীবন ছিল গভীর নৈতিকতা ও ত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
তাঁর প্রধান কাজগুলির মধ্যে একটি হলো ‘দ্য কস্ট অফ ডিসাইপলশিপ’।
এই বিতর্কের কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে, আমরা দেখি এর পেছনে রয়েছে এরিক মেটাক্সাস নামক একজন লেখকের লেখা একটি জীবনীগ্রন্থ।
এই গ্রন্থে বনহোফারকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদীদের রাজনৈতিক এজেন্ডাকে সমর্থন করে।
বনহোফারের পরিবারের সদস্যরাও এই বিষয়ে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বনহোফার কখনোই চরমপন্থী, সহিংস আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
বরং, তিনি এইসব গোষ্ঠীর তীব্র নিন্দা করতেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বনহোফারের আদর্শকে ভুলভাবে ব্যবহার করার ফলে, তাঁর প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে মানুষ দূরে চলে যেতে পারে। এর ফলস্বরূপ, সমাজে বিভেদ ও ঘৃণা আরও বাড়তে পারে।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের কুফল অনেক। অতীতেও দেখা গেছে, ধর্মকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে।
নাৎসি জার্মানির সময়েও, কিছু খ্রিস্টান নেতা হিটলারকে সমর্থন করেছিলেন। তাঁরা হিটলারকে ঈশ্বরের দূত হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে, আমাদের সকলের সচেতন থাকতে হবে। ডিয়েট্রিখ বনহোফারের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং সহিষ্ণুতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
বর্তমান বিশ্বে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের চরমপন্থা মাথাচাড়া দিচ্ছে, সেখানে বনহোফারের জীবন ও আদর্শ বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। তাঁর আত্মত্যাগ, সাহস এবং নৈতিকতার প্রতি অবিচলতা আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন