পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে সম্প্রতি বিতর্কিত একটি বিল নিয়ে বিক্ষোভের জেরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এই বিলটি হলো ‘ওয়াকফ্’ (Waqf) সম্পত্তি সংক্রান্ত একটি সংশোধনী, যা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পাশ করেছে।
এই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে এবং দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
ওয়াকফ্ হলো মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহারের জন্য উৎসর্গীকৃত সম্পত্তি। নতুন বিলে ওয়াকফ্ সম্পত্তি দেখাশোনার ক্ষেত্রে অ-মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
তাদের আশঙ্কা, এর ফলে ওয়াকফ্ সম্পত্তির অধিকার দুর্বল হয়ে পড়বে এবং অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা—যেমন মসজিদ, কবরস্থান—সংরক্ষণ করা কঠিন হবে।
এই বিলটি নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও বিতর্ক চলছে। ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতারা এই বিলকে মুসলিম সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করার একটি কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তাদের মতে, এটি শুধু মুসলিমদের বিরুদ্ধেই নয়, বরং ভবিষ্যতে অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রতিও একই ধরনের পদক্ষেপের ইঙ্গিত বহন করে।
অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বলছে, এই সংশোধনী ওয়াকফ্ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনবে এবং দুর্নীতির অবসান ঘটাবে।
তবে সমালোচকরা বলছেন, বিজেপি সরকার সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে, কারণ অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিলের বিরোধিতা করে বলেছেন, তার সরকার রাজ্যে এটি কার্যকর করবে না।
তিনি শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং জনগণকে কোনো ধরনের ‘অনৈতিক’ কাজে জড়িত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, এই ঘটনার জেরে ৪০০ জনের বেশি হিন্দু মুর্শিদাবাদ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিল ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য, সেখানে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা