যুক্তরাষ্ট্রে মারাত্মক হামলারূপে দেখা দিয়েছে হাম রোগের প্রাদুর্ভাব, যা নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যকে কেন্দ্র করে পশ্চিমাঞ্চলে এর বিস্তার ঘটেছে, যা কয়েক দশক ধরে দেখা যাওয়া সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে একটি।
দুর্বল হয়ে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, টিকাদান কর্মসূচির প্রতি জনগণের অনীহা, এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যের কারণে এই পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করছে। তারা স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে।
তবে, সরকারি স্বাস্থ্যখাতে অর্থ বরাদ্দ কমে যাওয়ায় এই কার্যক্রমগুলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, নিউ মেক্সিকোতে ভ্যাকসিন সরবরাহ এবং টিকাদান রেকর্ড পরীক্ষা করার জন্য নিযুক্ত প্রায় ২০ জন কর্মীর চুক্তি বাতিল করতে হয়েছে।
ডালাস কাউন্টিতেও অর্থ সংকটের কারণে ৫০টির বেশি টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ করতে হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাম রোগের প্রাদুর্ভাবের মোকাবিলায় জনগণের আস্থা খুবই জরুরি। কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আস্থাহীনতা বেড়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকেরও কম মানুষ স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ওপর স্বাস্থ্য বিষয়ক সঠিক পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে “পূর্ণ আস্থা” রাখে।
হাম একটি অত্যন্ত সংক্রামক রোগ। একজন আক্রান্ত ব্যক্তি সহজেই অন্যদের মধ্যে এটি ছড়াতে পারে। তাই, রোগটি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা, তাদের আলাদা করা এবং সম্ভাব্য আক্রান্তদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা জরুরি। এছাড়া, টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা এবং রোগের বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো – টিকাদান। হামের এমএমআর (MMR) ভ্যাকসিন অত্যন্ত কার্যকর।
এক ডোজ ভ্যাকসিন ৯৩% পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে, এবং দ্বিতীয় ডোজ নিলে সুরক্ষার হার ৯৭% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
তবে, অনেক ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ভ্যাকসিনের গুরুত্বকে খাটো করে দেখিয়েছেন, যা জনগণের মধ্যে দ্বিধা তৈরি করছে।
এই পরিস্থিতিতে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের উচিত সঠিক তথ্য সরবরাহ করা এবং ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগ হামের বিস্তার রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আক্রান্ত এলাকা চিহ্নিত করা এবং সেখানে দ্রুত টিকাদান কর্মসূচি চালানো।
বিশেষ করে, ৬ মাস থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের দ্রুত এমএমআর ভ্যাকসিন দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে।
যেহেতু হাম একটি মারাত্মক রোগ এবং এটি দ্রুত ছড়াতে পারে, তাই এর বিস্তার রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। জনসচেতনতা বৃদ্ধি, টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা, এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আস্থা স্থাপন করে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: সিএনএন