বেলজিয়ামের রাজপুত্র লরেন্ট, যিনি দেশটির প্রাক্তন রাজার কনিষ্ঠ পুত্র, সরকারি ভাতা বাদে সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা পাওয়ার জন্য আইনি লড়াইয়ে হেরে গিয়েছেন। ব্রাসেলসের একটি আদালত সম্প্রতি এই রায় দেন।
আদালতের মতে, তাঁর এই আবেদন ছিল ‘ভিত্তিহীন’। আদালতে দায়ের করা মামলায় প্রিন্স লরেন্ট যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে তাঁর কাজের ধরনের কারণে তিনি স্বাধীন পেশাজীবীদের মতো সামাজিক নিরাপত্তা পাওয়ার যোগ্য।
তিনি আরও দাবি করেন যে, এই লড়াইয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল নীতিগত। তাঁর মতে, এটি টাকার বিষয় নয় বরং একটি অধিকারের প্রশ্ন।
তবে, আদালতের বক্তব্য ছিল ভিন্ন। আদালতের মতে, ৬১ বছর বয়সী প্রিন্স লরেন্টের দায়িত্বগুলি সরকারি কর্মচারীদের মতো, যেখানে কর্মীরা নির্দিষ্ট কিছু সুবিধা পান, কিন্তু কোনো সমন্বিত সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।
প্রিন্স লরেন্টের আইনজীবী অলিভিয়ের রিজকার্ট জানিয়েছেন, তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা বিবেচনা করছেন। রিজকার্ট বলেন, “আমরা যা চেয়েছিলাম, রায় তেমন হয়নি। তবে, বিচারটি বিস্তারিত এবং যুক্তিযুক্ত।
আমি এর কারণ বুঝতে পারছি।” ২০১৮ সালে, প্রিন্স লরেন্টকে একবার তাঁর বার্ষিক সরকারি ভাতার ১৫ শতাংশ কর্তন করা হয়েছিল।
কারণ, তিনি সরকারের অনুমতি ছাড়া বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। প্রিন্স লরেন্ট গত বছর রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৩ লক্ষ ৮৮ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকার সমান, ২১শে মে ২০২৪-এর বিনিময় হার অনুযায়ী) ভাতা পেয়েছেন।
তিনি তাঁর নিজস্ব বাড়িতে বিনা ভাড়ায় থাকেন। এই বিষয়ে প্রিন্স লরেন্ট বেলজিয়ান সম্প্রচারমাধ্যম আরটিবিএফ-কে বলেন, “এটা আর্থিক বিষয় নয়, বরং একটি নীতিগত বিষয়।
যখন কোনো অভিবাসী এখানে আসে, তখন সে নিবন্ধিত হয় এবং তার অধিকার থাকে। আমিও হয়তো একজন অভিবাসী, তবে এমন একজন, যার পরিবার এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে।”
আইনজীবী রিজকার্ট ‘লে সোয়ার’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলেছিলেন, প্রিন্স লরেন্ট কোনো ‘খেয়ালের বশে’ এই আইনি পদক্ষেপ নেননি। তাঁর মতে, সামাজিক নিরাপত্তা হলো ‘বেলজিয়ামের আইনে প্রত্যেক বাসিন্দার অধিকার, যা গরিব থেকে শুরু করে শীর্ষস্থানীয় কোটিপতি পর্যন্ত সবার জন্য প্রযোজ্য’।
রিজকার্ট আরও জানান, প্রিন্স লরেন্ট তাঁর ভাতার মাত্র ২৫ শতাংশ বেতন হিসেবে পান, কারণ বাকিটা ভ্রমণ এবং স্টাফদের বেতনসহ বিভিন্ন পেশাগত খরচের জন্য ব্যয় হয়। তাঁর হিসাব অনুযায়ী, প্রিন্সের মাসিক বেতন প্রায় ৫,০০০ ইউরোর (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৫ লক্ষ ৯২ হাজার টাকার সমান) কাছাকাছি, যা বেলজিয়ামের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মীর গড় বেতনের সমান।
তবে, তাঁর ক্ষেত্রে পুরো সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা পাওয়া যায় না। প্রিন্স লরেন্ট এবং তাঁর ব্রিটিশ স্ত্রী ক্ল্যারিয়ের তিনটি সন্তান রয়েছে, যাদের বয়স এখন ২০-এর কোঠায়।
তিনি তাঁর চিকিৎসা খরচ এবং পরিবারের আর্থিক সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ তাঁর মৃত্যুর পর রাজকীয় ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। সামাজিক নিরাপত্তা না থাকার কারণে লরেন্ট কিছু চিকিৎসা খরচ এবং অসুস্থতাজনিত কারণে বেতন পাওয়ার মতো সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।
উল্লেখ্য, প্রিন্স লরেন্ট গত ১০ বছর ধরে একটি পশু কল্যাণ ফাউন্ডেশন পরিচালনা করছেন, যেখানে বিনামূল্যে পশুচিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন সময়ে বেলজিয়ামের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং বিভিন্ন বোর্ডেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
আর্থিক বিষয় নিয়ে অসন্তুষ্ট হওয়ার ঘটনা বেলজিয়ামের রাজপরিবারে নতুন নয়। ২০১৩ সালে রাজা দ্বিতীয় আলবার্ট তাঁর পুত্র ফিলিপের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর তাঁর বার্ষিক ৯ লক্ষ ২৩ হাজার ইউরোর ভাতা পর্যাপ্ত ছিল না বলে মনে করেছিলেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান