শিরোনাম: প্রক্রিয়াজাত খাবারে ব্যবহৃত কিছু উপাদান ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়, গবেষণায় আশঙ্কা
আমাদের চারপাশে সহজলভ্য এবং দ্রুত তৈরি করা যায় এমন প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু সম্প্রতি একটি গবেষণা জানাচ্ছে, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারে ব্যবহৃত কিছু খাদ্য উপাদান, যা খাদ্যটিকে আকর্ষণীয় করে তোলে, তা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ফ্রান্সের একদল গবেষক ১ লক্ষ ৮ হাজারের বেশি মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে এই তথ্য পেয়েছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারের স্বাদ, রং এবং সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিক উপাদান, যা একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়, তাদের সম্মিলিত প্রভাব শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই উপাদানগুলোকে খাদ্য সংযোজন বা ফুড অ্যাডিটিভস (food additives) বলা হয়।
গবেষণায় চিহ্নিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ মিশ্রণ হলো: প্রথমত, পরিবর্তিত স্টার্চ, পেকটিন, গার গাম, ক্যারেজিনান, পলিফসফেট, পটাসিয়াম সরবেটস, কারকিউমিন এবং জ্যানথান গাম। দ্বিতীয়ত, সাইট্রিক অ্যাসিড, সোডিয়াম সাইট্রেট, ফসফরিক অ্যাসিড, সালফাইট অ্যামোনিয়া ক্যারামেল, এসিсульফেম পটাশিয়াম বা এসি-কে, অ্যাসপার্টেম, সুক্রালোজ, অ্যারাবিক গাম, ম্যালিক অ্যাসিড, কারনাউবা ওয়াক্স, পেপরিকা নির্যাস, অ্যান্থোসায়ানিন, গার গাম এবং পেকটিন। এই উপাদানগুলি সাধারণত বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি এবং আর্টিফিসিয়াল পানীয়তে পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উপাদানগুলো আলাদাভাবে তেমন ক্ষতিকর না হলেও, একসঙ্গে মিশে গেলে তাদের প্রভাব বেড়ে যায়।
উদাহরণস্বরূপ, বাজারে সহজলভ্য চিপস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস বা বিভিন্ন ফ্লেভার যুক্ত বিস্কুটের মতো খাবারে এইসব অ্যাডিটিভস-এর মিশ্রণ থাকে। দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যেতে পারে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই দুটি মিশ্রণের অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সামান্য ঝুঁকি বাড়ে। গবেষকরা আরও বলছেন, খাদ্য তালিকায় চিনি এবং ফ্যাট-এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করার পরেও এই ঝুঁকি দেখা গেছে, যা বিশেষভাবে উদ্বেগের কারণ।
এই গবেষণা খাদ্য প্রস্তুতকারকদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। কারণ, খাবারে ব্যবহৃত উপাদানগুলোর বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে, ভোক্তাদেরও খাদ্য লেবেল ভালোভাবে দেখে খাবার বাছাই করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সম্ভব হলে, প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে তাজা ফল, সবজি এবং কম প্রক্রিয়াকরণ করা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেশের খাদ্য সংস্কৃতিতে প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবহার বাড়ছে। তাই, এই গবেষণার ফলাফল আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি, খাদ্য উপাদান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন