যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হওয়া নাগরিকদের রাখা হয়েছে মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদরের কুখ্যাত একটি কারাগারে। সেখানকার বন্দীদের সঙ্গে তাদের জীবনযাত্রায় খুব বেশি পার্থক্য নেই বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি, সিএনএন-এর একটি প্রতিনিধি দল কারাগারটি পরিদর্শন করে সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে।
এল সালভাদরের ‘সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র’ হিসেবে পরিচিত ‘সেকোট’ কারাগারে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো এই অভিবাসীদের রাখা হয়েছে।
কারাগারের পরিচালক বেলারমিনো গার্সিয়া সিএনএন-কে জানান, সেখানে আসা বন্দীদের সুযোগ-সুবিধায় কোনো বিশেষ ছাড় দেওয়া হয় না।
কারাগারে থাকা বন্দীদের রাখা হয় সাধারণ বন্দীদের মতোই। তাদের মাথার চুল কামিয়ে দেওয়া হয় এবং প্রায় সারাদিন তারা ১০০ জন করে একটি সেলে থাকতে বাধ্য হন।
সেলগুলোতে কোনো ব্যক্তিগত জিনিস রাখারও অনুমতি নেই। এমনকি সেখানে নেই কোনো বিছানা বা বালিশ। বন্দীদের জন্য কংক্রিটের তৈরি বেঞ্চ রয়েছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন অন্তত ২৮০ জন মানুষকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠিয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ভেনেজুয়েলার কুখ্যাত গ্যাং ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’-এর সদস্য, আবার কেউ ‘এমএস-১৩’ গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত।
এছাড়াও, ভুল করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হওয়া কাইলমার আরমান্দো আব্রেগো গার্সিয়া নামের এক ব্যক্তিও রয়েছেন এই তালিকায়। কাইলমার মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা এবং পেশায় একজন শিট মেটাল কর্মী।
তার পরিবার রয়েছে এবং তার তিনটি সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
সিএনএন-এর প্রতিনিধি দলকে সেকোটের ৮ নম্বর সেলের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তবে, গার্সিয়া জানিয়েছেন, বন্দীদের শুনানির জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।
শুনানির সময় তাদের সেল থেকে বের করে সশস্ত্র প্রহরায় একটি কনফারেন্স রুমে নেওয়া হয়। সেখানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আইনজীবী এবং বিচারকদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হয়।
উল্লেখ্য, সেকোট কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়াধীন আসামীদেরও রাখা হয়।
এল সালভাদরে জরুরি অবস্থার কারণে অনেক ক্ষেত্রে ভুল করে সাধারণ নাগরিকদেরও আটক করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে নিজেও এমনটা স্বীকার করেছেন।
এরই মধ্যে কয়েক হাজার বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
কারাগারটির প্রতিটি সেলে রয়েছে কনফারেন্স রুম এবং একটি মেডিকেল ক্লিনিক। বন্দীদের সবসময় নজরে রাখার জন্য সেলের উপরে রয়েছে গার্ডদের টহল দেওয়ার ব্যবস্থা।
এমনকি, সেখানকার বাতিগুলোও সবসময় জ্বালানো থাকে।
কারাগারের ভেতরের জীবন অত্যন্ত কঠোর। বন্দীদের কোনো ব্যক্তিগত জিনিস রাখার অনুমতি নেই। তাদের জন্য রয়েছে খোলা টয়লেট এবং কংক্রিটের তৈরি বেসিন ও পানির জার।
বন্দীদের সেল থেকে বের করার সময় তাদের ভালোভাবে পরীক্ষা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিষয়ক সেক্রেটারি ক্রিস্টিন নোয়েম গত মাসে সেকোট পরিদর্শন করেন।
তিনি তখন বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করলে এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হতে পারে।
কারাগারের ধারণক্ষমতা প্রায় ৪০,০০০। নিরাপত্তা জনিত কারণে কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করতে রাজি হয়নি।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিতাড়িত নাগরিকদের অন্তর্ভুক্তির কারণেই সেখানে বন্দীর সংখ্যা বাড়ছে।
কারাগারটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল মাত্র সাত মাস এবং এটি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে চালু করা হয়।
কারাগারটির চারপাশে রয়েছে বৈদ্যুতিক বেড়া এবং ১৯টি ওয়াচ টাওয়ার।
সমালোচকদের মতে, সেকোট কারাগার মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তবে, এল সালভাদরের অনেকের কাছে এটি অপরাধ নিয়ন্ত্রণের একটি কার্যকর উপায় এবং দেশের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার প্রমাণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন