ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশের জেরে রাজ্যের জলবায়ু আইন নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে সংঘাতের শঙ্কা।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন একটি নির্বাহী আদেশ এসেছে, যা মূলত জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রণীত। এই আদেশের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিভিন্ন রাজ্যের নেওয়া পদক্ষেপগুলো নিয়ে দেশটির বিচার বিভাগের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য এই ধরনের নীতিগত পরিবর্তনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, উন্নত দেশগুলোতে গৃহীত পদক্ষেপের প্রভাব বিশ্বজুড়ে অনুভূত হয়।
**আদেশের মূল বিষয়**
মঙ্গলবার স্বাক্ষরিত এই আদেশে ট্রাম্প “জাতীয় জ্বালানি জরুরি অবস্থা” ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন, জ্বালানি উন্নয়নে রাজ্য সরকারগুলোর নেওয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
ট্রাম্পের মতে, কিছু রাজ্য সরকার তাদের সাংবিধানিক অধিকারের বাইরে গিয়ে জ্বালানিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। এই নির্দেশের প্রধান লক্ষ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় রাজ্যগুলোর নেওয়া আইনগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে জলবায়ু নীতির ‘বিপরীতমুখী যাত্রা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, দূষণ কমাতে তার রাজ্যের প্রচেষ্টা নির্বাহী আদেশের মতো ‘সাধারণ প্রেস রিলিজ’-এর মাধ্যমে দমিয়ে রাখা যাবে না।
নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হচুল এবং নিউ মেক্সিকোর গভর্নর মিশেল লুজান গ্রিশাম, যারা ইউএস ক্লাইমেট অ্যালায়েন্সের সহ-সভাপতি, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন।
**”সুপার ফান্ড” আইন এবং বিতর্ক**
বর্তমানে ভারমন্ট ও নিউইয়র্ক রাজ্যে “জলবায়ু সুপার ফান্ড” আইন নিয়ে ফেডারেল আদালতে চ্যালেঞ্জ চলছে। এই আইনগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে তাদের অতীতের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা।
ট্রাম্প এই ধরনের আইনকে জ্বালানি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে “চাঁদাবাজি” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষার প্রাক্তন সচিব জন কুইগলি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বিচার বিভাগ সম্ভবত রাজ্যের পানি ও বায়ু দূষণ সংক্রান্ত অন্যান্য আইনগুলোকেও চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
**জ্বালানি শিল্পের প্রতিক্রিয়া**
আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট (এপিআই), যা তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করে, ট্রাম্পের এই আদেশকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, এটি “তথাকথিত ‘জলবায়ু সুপার ফান্ড’ থেকে আমেরিকান জ্বালানিকে রক্ষা করবে।”
অন্যদিকে, পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এই আদেশের তীব্র সমালোচনা করেছে এবং এটিকে জীবাশ্ম জ্বালানি বিলিয়নেয়ারদের দ্বারা প্রভাবিত একটি পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, এখন দেখার বিষয় হলো, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ কিভাবে পরিবেশ রক্ষার আইনগুলোকে প্রভাবিত করে এবং এর ফলস্বরূপ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে কেমন প্রভাব পড়ে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস