গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়। এক সময়ের প্রাণবন্ত শিক্ষাঙ্গন, গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি এখন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
এক ভয়াবহ যুদ্ধের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে একসময় জ্ঞানচর্চা চলতো, সেখানে এখন চলছে জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম।
যুদ্ধ শুরুর আগে, গাজা শহরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৭,০০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতো। চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে শুরু করে সাহিত্য ও বাণিজ্য—বিভিন্ন বিষয়ে এখানে পাঠদান করা হতো।
এদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি ছিল নারী শিক্ষার্থী। কিন্তু এখন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই আগের চেহারা খুঁজে পাওয়া কঠিন।
ইসরায়েলের ১৮ মাসের অবিরাম বোমা হামলায় এলাকার ৫০,০০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। সেই ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কোণায় লেগে আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মিলনায়তনটি এখন পোড়া ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বোমার আঘাতে বিশাল ফাটল ধরেছে এর দেয়ালে।
বসার স্থানগুলো দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। গত ১৮ই মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে পুনরায় হামলা শুরুর পর থেকে, উত্তর গাজার শত শত পরিবারের জন্য এই ক্যাম্পাসটি আশ্রয়ের স্থান হয়েছে।
লেকচার হল ও শ্রেণীকক্ষগুলোতে এখন তাঁবু খাটিয়ে বসবাস করছে মানুষ। রান্নার জ্বালানির অভাবে, লাইব্রেরির বই পুড়িয়ে তারা কোনোমতে আগুন জ্বালাচ্ছে।
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাগানে শিশুদের খেলাধুলা করতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের নিচে একটি অস্থায়ী বাজার বসেছে, যেখানে জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য চলছে হাহাকার।
জাতিসংঘের মতে, গাজায় খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রীর প্রবেশ এক মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখানকার মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
সাহায্য সংস্থাগুলোর সীমিত সরবরাহ দিয়ে এত মানুষের চাহিদা মেটানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে গাজার এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের মানুষের কাছে গভীর উদ্বেগের কারণ। সেখানকার মানুষের এই দুর্দশা মানবিক বিপর্যয়কে আরও তীব্র করে তুলেছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই করুণ পরিণতি বুঝিয়ে দেয়, যুদ্ধ শুধু ধ্বংস ডেকে আনে না, কেড়ে নেয় মানুষের ভবিষ্যৎও।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা