যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতিতে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে। আদালতের নির্দেশে, কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনেজুয়েলার প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের মানবিক প্যারোলের (বিশেষ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি) মেয়াদ এখনই বাতিল করা যাবে না।
এই সিদ্ধান্তের ফলে ওইসব দেশের নাগরিকরা আপাতত তাদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার এবং বসবাসের সুযোগ বহাল রাখতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার, বিচারক ইন্দিরা তালওয়ানি জানান, ট্রাম্প প্রশাসন যাদের মানবিক প্যারোলের অনুমতি বাতিল করতে চেয়েছিল, তাদের বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করা হলো। এই প্রোগ্রামটি মূলত বাইডেন প্রশাসনের সময় তৈরি হয়েছিল, যেখানে কিছু শর্তসাপেক্ষে এই চারটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের ও কাজের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা সাধারণত দুই বছরের জন্য কার্যকর ছিল।
আদালতে শুনানিতে বিচারক তালওয়ানি সরকারের এই পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, এই প্রোগ্রামের অধীনে থাকা অভিবাসীদের হয় দেশ ছাড়তে হবে, না হয় সবকিছু হারানোর ঝুঁকি নিতে হবে।
বিচারক আরও উল্লেখ করেন, প্রোগ্রামটি বাতিলের পেছনে সরকারের যুক্তি আইনের ভুল ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।
আদালতের বাইরে, হাইতিয়ান ব্রিজ অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক গার্লিন জোসেফ বলেন, এই প্রোগ্রামের ওপর আঘাত ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা শুনি, অবৈধভাবে আসা মানুষদের বিতাড়িত করতে চায় প্রশাসন। কিন্তু আজ আমরা দেখছি, যারা বৈধভাবে এসেছেন, কর দিচ্ছেন এবং কাজ করছেন, তারাও আক্রমণের শিকার।”
ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের কর্মী সিজার বায়াজ, যিনি একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে মানবিক প্যারোলের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন, এই রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
তিনি জানান, জীবন বাঁচানোর তাগিদে তিনি দেশ ছেড়েছিলেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তিনি এখানে আসেন এবং বর্তমানে ওয়াশিংটনের একটি গণমাধ্যমে প্রযোজক হিসেবে কাজ করছেন।
তিনি আরও জানান, এখানে বৈধভাবে থাকার জন্য তিনি ইতোমধ্যে ভিসার আবেদন করেছেন এবং রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। সিজারের মতে, আদালতের এই রায় তার জন্য একটি আশা। তিনি বলেন, “আমার জন্য সুরক্ষা পাওয়াটা খুব জরুরি, যাতে আমাকে ভেনেজুয়েলায় ফেরত পাঠানো না হয়। আমি নিশ্চিত, সেখানে পা রাখলে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে বন্দী করা হবে।”
অন্যদিকে, কিউবার বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সী জামোরা, যিনি শুধুমাত্র নিজের পদবি ব্যবহার করতে চেয়েছেন, এই রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
তিনি জানান, তার প্যারোল এবং ওয়ার্ক পারমিট সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। জামোরার ভাষায়, “আমরা যারা এখানে এসেছি, তারা সবাই অনেক ব্যাকগ্রাউন্ড চেক পার হয়ে এসেছি।
সরকার আমাদের এমনভাবে বিতাড়িত করতে চাইছে, যেন আমরা অপরাধী এবং অবৈধভাবে প্রবেশ করেছি।”
আবেদনকারীদের আইনজীবীরা এই পদক্ষেপকে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করেছেন এবং এর ফলে মানুষ তাদের কাজ করার অধিকার হারাবে বলে মন্তব্য করেছেন।
তারা আরও বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত ফেডারেল নিয়ম লঙ্ঘন করে।
সরকারের আইনজীবী ব্রায়ান ওয়ার্ড আদালতে যুক্তি দিয়ে জানান, প্রোগ্রামটি বাতিল হলেও, অভিবাসীদের অন্য প্রোগ্রামের মাধ্যমে বসবাসের সুযোগ থাকতে পারে। তবে, বিচারক তালওয়ানি এই যুক্তিতে সন্দেহ প্রকাশ করেন, কারণ তাদের গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যদি তারা কোনো দুর্ঘটনায় পড়েন অথবা হাসপাতালে যান।
এই সিদ্ধান্তের ফলে অভিবাসন বিষয়ক অনেক সংগঠন তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার তিনজন কিউবান-আমেরিকান প্রতিনিধি এই বিতাড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
তাদের মধ্যে একজন, মারিয়া সালাজার, সম্প্রতি একটি বিলের সহ-পৃষ্ঠপোষক হয়েছেন, যা মানবিক প্যারোলে থাকা ব্যক্তিদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দেবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন