প্রেমের অন্য রূপ: তীব্র আকর্ষণের ‘লাইমারেংস’ এবং এর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ।
ভালোবাসা মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে, ভালোবাসার অনুভূতি যখন তীব্র আকাঙ্ক্ষা, মোহ এবং উদ্বেগের রূপ নেয়, তখন তাকে ‘লাইমারেংস’ (Limerence) বলা হয়।
মনোবিজ্ঞানী ডরোথি টেনভ (Dorothy Tennov) এই শব্দটির অবতারণা করেন। লাইমারেংস হলো ভালোবাসার এমন এক পর্যায়, যেখানে ব্যক্তি অন্য কারও প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করেন। এই আকর্ষণে এক ধরনের ঘোর তৈরি হয়, যা অনেক সময় আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়।
সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা মানুষের মস্তিষ্কের উপর লাইমারেংসের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. টম বেলামি (Dr. Tom Bellamy) তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং গবেষণার মাধ্যমে লাইমারেংসের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন।
তাঁর মতে, লাইমারেংস মস্তিষ্কের এক বিশেষ অবস্থা, যা তীব্র আবেগ, আকর্ষণ এবং আকর্ষিত ব্যক্তির প্রতি গভীর মনোযোগের জন্ম দেয়। ড. বেলামি তাঁর নিজের জীবনে কর্মক্ষেত্রে এক সহকর্মীর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন, যা তাঁর বিবাহিত জীবনে সংকট তৈরি করে।
এই ঘটনার পরেই তিনি লাইমারেংস নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা শুরু করেন।
ড. বেলামির গবেষণায় উঠে এসেছে, লাইমারেংসের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে, তীব্র আনন্দ বা উচ্ছ্বাস, অন্য ব্যক্তির প্রতি গভীর মনোযোগ, সেই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, এবং তার চিন্তা অথবা উপলব্ধির প্রতি অতি আগ্রহ।
এমনকি, সামান্য কারণে মেজাজ পরিবর্তনও হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে, এটি আসক্তির মতো আচরণ তৈরি করতে পারে, যা ব্যক্তির জীবনকে কঠিন করে তোলে।
গবেষণায় দেখা গেছে, জনসংখ্যার প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষ জীবনে কোনো না কোনো সময় লাইমারেংসের অভিজ্ঞতা লাভ করে। যাদের মধ্যে একটা বড় অংশ এর কারণে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনে ক্ষতির শিকার হন।
যাদের মধ্যে উদ্বেগপ্রবণতা বেশি, যেমন— যারা সঙ্গীর কাছ থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা খোঁজেন, তাদের মধ্যে লাইমারেংসের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
ড. বেলামি তাঁর গবেষণার ফল নিয়ে ‘স্মিটেন: রোমান্টিক অবসেসন, দ্য নিউরোসায়েন্স অফ লাইমারেংস অ্যান্ড হাউ টু মেক লাভ লাস্ট’ (Smitten: Romantic Obsession, the Neuroscience of Limerence and How to Make Love Last) নামে একটি বই লিখেছেন।
বইটিতে তিনি লাইমারেংসের কারণ, মস্তিষ্কের উপর এর প্রভাব এবং এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
লাইমারেংস-এর অভিজ্ঞতা কারো জন্য কষ্টকর হতে পারে। তবে, ড. বেলামির মতে, এই অভিজ্ঞতা থেকে উত্তরণের মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের সম্পর্কে নতুন করে জানতে পারে এবং জীবনের সঠিক দিক খুঁজে নিতে পারে।
এটি আত্ম-উন্নয়নের একটি সুযোগও হতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian