বিশ্বজুড়ে অভিজাত হোটেলগুলোতে আজকাল গোপনীয়তার এক নতুন হাওয়া লেগেছে। একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের মধ্যে এইসব হোটেলের চাকচিক্য নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে, তেমনই এইসব হোটেলের অন্দরমহলে তৈরি হচ্ছে বিশেষ কিছু জায়গা – গোপন পানশালা বা “স্পিকইজি”।
যেখানে সাধারণের প্রবেশাধিকার নেই, অথবা থাকলেও তা বেশ কঠিন। এই ধরনের গোপনীয়তা এবং বিশেষত্বের কারণেই এইসব স্থানগুলো ভ্রমণকারীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
আবু ধাবির ফোর সিজনস হোটেলে অবস্থিত “দ্য হাইডওয়ে” (The Hideaway) তেমনই একটি গোপনীয় স্থান। আল মারিয়াহ দ্বীপের এই হোটেলে, একটি গোপন লিফট দিয়ে ভূগর্ভে নামার পরেই চোখে পড়ে ১৯২০-এর দশকের আমেরিকার “নিষিদ্ধ যুগ”-এর (Prohibition era) আদলে তৈরি এক বিশেষ জগৎ।
সেখানে দুষ্প্রাপ্য আসবাব, পুরনো দিনের পোশাক এবং গয়নার সম্ভার দেখা যায়। এই স্পটটিতে প্রবেশ করতে হলে, হোটেলের কর্মীদের সাহায্য নিতে হয়।
এই ধরনের গোপনীয়তার প্রবণতা এখন বিশ্বজুড়ে বাড়ছে। লন্ডনের “স্পাই বার” (Spy Bar) তেমনই একটি উদাহরণ। র্যাফেলস লন্ডন অ্যাট দ্য ওডব্লিউ (Raffles London at the OWO) হোটেলের নিচে, একসময় যে স্থানটি শুধুমাত্র “ভিআইপি”-দের জন্য সংরক্ষিত ছিল, এখন তা গুগল-এও খুঁজে পাওয়া যায়, এমনকি হোটেলের ওয়েবসাইটেও এর উল্লেখ রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অবস্থিত ফোর সিজনস হোটেলে “চার্লস এইচ” (Charles H.) নামের একটি বার রয়েছে, যা “ওয়ার্ল্ডস ফিফটি বেস্ট বার্স”-এর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
তবে, এখনো অনেক গোপনীয় স্থান রয়েছে যা সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। এইসব বিশেষ স্থানগুলো সম্পর্কে একমাত্র হোটেল কর্মীদের, বা বিশেষভাবে পরিচিত ভ্রমণ পরামর্শকদের কাছেই খবর থাকে।
ভ্রমণ বিষয়ক পরামর্শদাতা তানিয়া সোয়াসব্রুক জানান, “যেগুলো অনলাইনে খুঁজে পাওয়া যায় না, সেই জায়গাগুলোই আসল স্পিকইজির স্বাদ এনে দেয়।
মেক্সিকো সিটিতে সম্প্রতি চালু হওয়া হোটেল ভলগার “মিনোস সাউন্ড রুম” (Minos Sound Room) তেমনই একটি উদাহরণ। এখানে সেরা ডিজে’রা তাদের সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
কাতারের দোহাতে র্যাফেলস-এর “ব্লু সিগার রাইটার্স লাউঞ্জ”-এর (Blue Cigar Writer’s Lounge) ভেতরেও রয়েছে গোপন একটি কক্ষ, যেখানে মাত্র দু’জনের বসার ব্যবস্থা।
কিছু হোটেলে এই গোপনীয়তা রক্ষার কায়দা বেশ অভিনব। যেমন, অ্যাঙ্গুইলার মালিয়ুহানা রিসোর্টে (Malliouhana) আগত অতিথিদের একটি বিশেষ ধাঁধা-বাক্স দেওয়া হয়। বাক্সটি খুললে, ভেতরের আমন্ত্রণপত্রটি তাদের নিয়ে যায় “আলবার্টস”-এ (Albert’s)।
রিসোর্টের পুরনো ওয়াইন সেলারটিকে নতুন করে সাজিয়ে এই গোপনীয় আড্ডাস্থল তৈরি করা হয়েছে।
বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্পের বোটানিক স্যাংচুয়ারি হোটেলে (Botanic Sanctuary Antwerp) “আনপ্রেসিডেন্টেড” (Unprecedented) নামের একটি বিরল হুইস্কি ক্লাব রয়েছে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর একটি পুরনো মঠের ভেতরে, আলো-আঁধারিতে ঘেরা এই ক্লাবের ঠিকানা সহজে কারো চোখে পড়ে না।
হোটেলটির বিপণন পরিচালক সান্দ্রিন ভার্সাভেল জানান, তাঁরা সক্রিয়ভাবে এই ক্লাবের প্রচার করেন না, এমনকি কোনো সাইনবোর্ডও ব্যবহার করেন না।
তবে, ক্লাবের সদস্যরা মাঝে মাঝে হোটেলের অতিথিদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, যেখানে ছবি তোলা বা ফোন ব্যবহারের অনুমতি থাকে না।
এই ধরনের গোপনীয় বারগুলোর মূল আকর্ষণ হলো এর বিশেষত্ব। সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে, একটি বিশেষ জগৎ তৈরি করাই এদের প্রধান উদ্দেশ্য। যারা একটু ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা ভালোবাসেন, তাঁদের কাছে এই ধরনের স্থানগুলো স্বপ্নের মতো।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার