থাইল্যান্ডের বর্ষবরণের উৎসব: জলকেলির আনন্দে মেতে ওঠার দিন।
এপ্রিল মাস আসলেই থাইল্যান্ডে শুরু হয় এক অন্যরকম উৎসবের আমেজ। এটি থাইল্যান্ডের বর্ষবরণ উৎসব, যা ‘সংক্রান’ নামে পরিচিত।
জলকেলি, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আর নতুন শুরুর এক দারুণ মিলনমেলা হলো এই উৎসব। ইউনেস্কো (UNESCO) এটিকে ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ বা অস্পৃশ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
সংক্রান উৎসব মূলত ১৩ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পালিত হয়, তবে কোনো কোনো স্থানে এর ব্যাপ্তি কয়েক দিন পর্যন্ত চলতে থাকে।
এই সময়ে থাইল্যান্ডের আবহাওয়া বেশ গরম থাকে, তাই এটি ছুটি কাটানোর এবং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করে।
বর্ষবরণের এই উৎসবে সবাই মিলেমিশে জলকেলিতে মেতে ওঠে। বয়স্ক থেকে শুরু করে শিশু, সবার হাতেই দেখা যায় জলের পিস্তল বা বালতি।
এই জলকেলির উৎসবটি সংক্রানের সবচেয়ে পরিচিত দিক।
সংক্রান শব্দের উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত শব্দ থেকে, যা রাশিচক্রের মাসিক গতি নির্দেশ করে। থাই নববর্ষের সূচনাও হয় এই সময়ে।
এই উৎসব শুধু জলকেলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে অনেক ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিও।
সংক্রানের সময় বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে বিশেষ পূজা-অর্চনার আয়োজন করা হয়। এই দিনে বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর মূর্তিগুলোকে জল দিয়ে স্নান করানো হয়।
এটি ‘সং নাম ফরা’ নামে পরিচিত। এছাড়াও, পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের হাতে সুগন্ধি জল ঢেলে তাঁদের আশীর্বাদ নেওয়া হয়।
এটি ‘রোট নাম দাম হুয়া’ নামে পরিচিত একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি।
ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে সংক্রান উৎসব এখন সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে।
ব্যাংককের খাও সান রোড এবং সিলম রোড থেকে শুরু করে চিয়াং মাইয়ের পুরনো শহর পর্যন্ত— সর্বত্রই এই উৎসবে মেতে ওঠে মানুষ।
উৎসবের সময় রাস্তায় প্রচুর মানুষের সমাগম হয়, তাই কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।
সংক্রানের সময় সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়ে যায়, যার প্রধান কারণ মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো।
এছাড়াও, নারীদের প্রতি হয়রানির অভিযোগও শোনা যায়।
তাই পর্যটকদের জরুরি প্রয়োজনে টুরিস্ট হটলাইন (১১৫৫)-এ ফোন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
মূল্যবান জিনিসপত্র জলরোধী ব্যাগে রাখা উচিত।
সংক্রানের সময় পরিধেয় বস্ত্রের দিকেও নজর রাখা দরকার।
উৎসবের আনন্দে সবাই উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরে, যা উৎসবের আমেজ আরও বাড়িয়ে তোলে।
খাবারের দিক থেকেও সংক্রান উৎসবের একটি বিশেষত্ব রয়েছে।
এই সময় বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় খাবার পরিবেশন করা হয়। এর মধ্যে ‘ খাও ছায়ে’ অন্যতম, যা গ্রীষ্মকালে পরিবেশিত একটি বিশেষ খাবার।
এছাড়া, পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার হলো ‘ম্যাংগো স্টিকি রাইস’।
সংক্রান উৎসব থাইল্যান্ডের মানুষের কাছে শুধু একটি আনন্দ উৎসব নয়, এটি তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি।
জলকেলির মাধ্যমে পুরনো বছরের গ্লানি মুছে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় তারা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন