ইতালির (Italy) কেন্দ্র-দক্ষিণে অবস্থিত মোলিস (Molise) অঞ্চলটি যেন এক অচেনা জগৎ। লাৎসিও, আব্রুজ্জো, আপুলিয়া এবং কাম্পানিয়া অঞ্চলের মাঝে অবস্থিত এই জায়গাটি পর্যটকদের কাছে এখনো সেভাবে পরিচিত নয়।
এমনকি ইতালির অনেক মানুষের কাছেও মোলিস একটি অজানা স্থান। তবে যারা এই অঞ্চলের কথা জানেন, তারা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস আর সংস্কৃতির গভীরতা উপলব্ধি করতে পারেন।
এটি যেন ইতালির একটি লুকানো রত্ন, যেখানে পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করছে প্রকৃতির অপূর্ব দৃশ্য, প্রাচীন স্থাপত্য আর স্থানীয় সংস্কৃতির স্বাদ।
**প্রকৃতির কোলে মোলস**
ছোট্ট এই অঞ্চলের আকর্ষণ কিন্তু অনেক। এখানে রয়েছে অ্যাপেনাইন পর্বতমালা (Apennine Mountains), সবুজ উপত্যকা এবং ইতালির সুন্দর সমুদ্র সৈকত।
যারা পাহাড় ভালোবাসেন, তারা এখানকার সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় ট্রেকিং করতে পারেন। আবার যারা সমুদ্র ভালোবাসেন, তাদের জন্য তো রয়েছে টার্মোলি (Termoli) ও ক্যাম্পোমারিনোর (Campomarino) মতো সৈকত।
এখানকার সমুদ্র সৈকতগুলি তাদের পরিচ্ছন্নতা এবং পরিবেশবান্ধবতার জন্য ‘ব্লু ফ্ল্যাগ’ (Blue Flag) খেতাব পেয়েছে। যেন প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি।
**প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতির নিদর্শন**
প্রকৃতির পাশাপাশি মোলিসে রয়েছে ইতিহাসের এক বিশাল ভান্ডার। এখানকার সংস্কৃতি ও ইতিহাস আপনাকে মুগ্ধ করবে।
এখানকার কিছু ঐতিহাসিক স্থান রোমের কলোসিয়াম (Colosseum) বা ফ্লোরেন্সের ডুওমোর (Duomo) চেয়েও পুরনো।
এখানকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হল অ্যাব্রুজ্জো, লাৎসিও এবং মোলিসের জাতীয় উদ্যান (National Park of Abruzzo, Lazio, and Molise)। ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পার্কে রয়েছে ঘন বনভূমি, হ্রদ, নদী এবং অ্যাপেনাইন পর্বতমালার সুন্দর দৃশ্য।
এছাড়াও, এখানে রয়েছে বিরল প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ, যা প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এক দারুণ আকর্ষণ।
প্রাচীন সামনাইটদের (Samnites) ইতিহাস আজও এই অঞ্চলে বিদ্যমান।
তারা একসময় রোমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। তাদের সভ্যতার নিদর্শন এখনো পিয়েত্রাব্বোনদান্তে (Pietrabbondante) এলাকার ধ্বংসাবশেষে দেখা যায়।
এখানে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এবং একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির অ্যাম্ফিথিয়েটার রয়েছে, যা খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে নির্মিত হয়েছিল।
এখানকার টিকিট মূল্য ৭ ডলারের (প্রায় ৮০০ টাকা) কম।
আগনোন (Agnone) শহরটি তার প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত।
এখানকার মারিনেলি পন্টিফিক্যাল বেল ফাউন্ড্রি (Marinelli Pontifical Bell Foundry) এক হাজার বছরের পুরনো একটি পারিবারিক ব্যবসা, যা সম্ভবত বিশ্বের প্রাচীনতম।
এখানে ঘণ্টা তৈরির প্রক্রিয়াটি আজও একই পদ্ধতিতে করা হয়, যা পর্যটকদের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ।
এছাড়া, প্রতি বছর ডিসেম্বরে এখানে ‘এনডোকিয়াটা’ (ʼNdocciata) নামে একটি বিশাল অগ্নুৎসব হয়, যা এখানকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য।
এই উৎসবে প্রায় ১০০০-এর বেশি হাতে তৈরি মশাল জ্বালানো হয়।
**স্বাদে মোলস**
মোলিসের খাবারও খুব বিখ্যাত। এখানকার স্থানীয় খাবারগুলি তাজা উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়।
এখানকার “ক্যাসিওকাভালো” (Caciocavallo) পনির, যা দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের পনিরের মতো, এখানকার একটি জনপ্রিয় খাবার।
এছাড়া, এখানকার পাস্তা, মাংস এবং বিভিন্ন ধরনের ফল ও মিষ্টান্নও খুব সুস্বাদু।
মোলিসের খাবারগুলো এখানকার সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বর্তমানে, মোলিসের অনেক ঐতিহাসিক ভবন নতুন করে সাজানো হচ্ছে।
এখানকার “পালাজো ক্যানাভিনা” (Palazzo Cannavina) তেমনই একটি উদাহরণ।
সপ্তদশ শতকে নির্মিত এই প্রাসাদটি এখন একটি বুটিক হোটেলে রূপান্তরিত হয়েছে।
সব মিলিয়ে, মোলিস যেন ইতালির এক গোপন রত্ন। প্রকৃতির সৌন্দর্য, ইতিহাসের গভীরতা আর স্থানীয় সংস্কৃতির স্বাদ – সব মিলিয়ে মোলিস একটি অসাধারণ গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার