যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের অলিম্পিক ন্যাশনাল পার্ক: প্রকৃতির নীরবতা আর সৌন্দর্যের লীলাভূমি
সারা বিশ্ব থেকে প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় একটি গন্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের অলিম্পিক ন্যাশনাল পার্ক। সিয়াটলের কাছে অবস্থিত এই পার্কটি তার বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। এখানকার সবুজ বনভূমি, বরফাচ্ছাদিত পর্বতমালা, আর সমুদ্র উপকূল—সবকিছু যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে।
যারা প্রকৃতির নীরবতা ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই পার্কটি হতে পারে আদর্শ জায়গা।
প্রায় দশ লক্ষ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই পার্কটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ ব্যবস্থা। একদিকে যেমন রয়েছে উঁচু পর্বতমালা, তেমনই অন্যদিকে দেখা যায় বিশাল প্রশান্ত মহাসাগরের ঢেউ। এখানকার ঘন সবুজ অরণ্য, যা উত্তর আমেরিকার অবশিষ্ট কয়েকটি নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টিবনের মধ্যে অন্যতম, পর্যটকদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ।
তবে অলিম্পিক ন্যাশনাল পার্কের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হলো এর নীরবতা। এখানে, বিশেষ করে ‘হোহ রেইন ফরেস্ট’-এর গভীরে, এমন একটি স্থান আছে, যা ‘ওয়ান স্কোয়ার ইঞ্চি অফ সাইলেন্স’ নামে পরিচিত। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘কোয়াইট পার্কস ইন্টারন্যাশনাল’-এর মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের সবচেয়ে শান্ত জায়গা।
গাড়ির হর্ন বা বিমানের শব্দ থেকে দূরে, এখানে প্রকৃতির নীরবতা উপভোগ করা যায়।
যদি আপনি এই পার্কে ভ্রমণ করতে চান, তাহলে কিছু বিষয় জেনে রাখা ভালো।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে সরাসরি অলিম্পিক ন্যাশনাল পার্কে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রথমে আপনাকে আকাশপথে সিয়াটল-টাকোমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (SEA) যেতে হবে। সেখান থেকে গাড়ি বা ফেরি করে পার্কে পৌঁছানো যায়। সিয়াটল থেকে গাড়িতে গেলে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে।
তবে ফেরিতে করে গেলে ভ্রমণটা আরও উপভোগ্য হয়, কারণ এই পথে যাওয়ার সময় তিমি সহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী দেখার সুযোগ থাকে।
ভ্রমণের সেরা সময়:
সাধারণত জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত, যখন বৃষ্টি কম হয় এবং আবহাওয়া বেশ উষ্ণ থাকে, তখন এখানে ভ্রমণ করা সবচেয়ে ভালো। তবে শীতকালে এখানকার কিছু রাস্তা, লজ এবং ক্যাম্পগ্রাউন্ড বন্ধ থাকে।
থাকার ব্যবস্থা:
পার্কের ভেতরে এবং বাইরে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে ১৪টি ক্যাম্পগ্রাউন্ড আছে, যেখানে আপনি ক্যাম্পিং করতে পারেন। এছাড়া, ঐতিহাসিক কালালোক লজ-এর মতো জায়গায়ও থাকার ব্যবস্থা আছে, যা সমুদ্র এবং বনের মাঝে অবস্থিত।
এখানে বিভিন্ন ধরনের কক্ষ রয়েছে, যেখান থেকে সমুদ্রের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়াও, আপনি সোল ডাক হট স্প্রিংস রিসোর্টে থাকতে পারেন, যেখানে গরম জলের ঝর্ণাগুলোতে স্নান করার সুযোগ রয়েছে।
লেক কুইনাল্ট লজ-এর মতো সুন্দর জায়গায় থাকলে শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশে সময় কাটানো যেতে পারে।
দর্শনীয় স্থান ও আকর্ষণ:
অলিম্পিক ন্যাশনাল পার্কে ঘোরার মতো অনেক সুন্দর জায়গা আছে। এখানকার ‘হোহ রেইন ফরেস্ট’-এর ‘হল অফ মসেস’ এবং ‘হোহ রিভার ট্রেইল’-এর মতো পথ ধরে হেঁটে যাওয়া এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। রিয়াল্টো বিচ-এর সমুদ্রের ধারে হেঁটে বেড়ানো, যেখানে বিশাল সমুদ্রের ঢেউ এবং বিভিন্ন আকারের পাথর দেখা যায়, অনেক পর্যটকের প্রিয়।
এখানকার ‘হারিকেন রিজ’-এ দাঁড়িয়ে পাহাড়ের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এছাড়াও, লেক ক্রিসেন্ট এবং লেক ওজেট-এর মতো লেকে সাঁতার কাটা বা কায়াকিং করার সুযোগ রয়েছে।
এখানে আসা পর্যটকদের জন্য বন্যপ্রাণী দেখা একটি বিশেষ আকর্ষণ। আপনি এখানে ভালুক, হরিণ, মারমট, সমুদ্র সিংহ, এবং ঈগল সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী দেখতে পারেন।
খাবার:
এখানে বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট আছে, যেখানে আপনি স্থানীয় খাবার উপভোগ করতে পারবেন। লেক কুইনাল্টের ‘স্যালমন হাউস রেস্টুরেন্ট’-এ স্যামন মাছ বিভিন্নভাবে পরিবেশন করা হয়। এছাড়াও, আপনি ‘সalty girls’ রেস্টুরেন্টে সি-ফুড এবং ‘গ্র্যানি’স ক্যাফে’-তে সাধারণ খাবার যেমন বার্গার, মিল্কশেক ইত্যাদি উপভোগ করতে পারেন।
রাতের বেলা:
দিনের বেলা পাহাড় আর বনের সৌন্দর্য উপভোগ করার পর, রাতের আকাশে তারা দেখতে পারেন। এখানকার আকাশ এতটাই পরিষ্কার থাকে যে, তারাগুলো যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
সুতরাং, যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন এবং কোলাহলমুক্ত পরিবেশে কিছুটা সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য অলিম্পিক ন্যাশনাল পার্ক একটি আদর্শ জায়গা।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লিজার