লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন বলেছেন, হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার বিষয়টি একটি ‘সংবেদনশীল’ এবং ‘কঠিন’ বিষয়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দেশটির উপর হামলা অব্যাহত রাখায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল এখনো হামলা চালাচ্ছে। খবর অনুসারে, দেশের শান্তি বজায় রাখতে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
রবিবার ইস্টার উপলক্ষ্যে এক মারোনাইট ধর্মগুরুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সাবেক এই সেনা প্রধান এমন মন্তব্য করেন।
তাঁর মতে, ইরান-পন্থী এই দলের অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করার বিষয়টি বিবেচনাপূর্ণভাবে পরিচালনা করতে হবে। তিনি বলেন, “লেবাননের অভ্যন্তরের যে কোনও বিতর্কিত বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
অন্যথায়, এটি দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বৈরুতকে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার জন্য চাপ দিচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট আউন ঘোষণা করেছেন যে, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ তিনি এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চান।
কোনো শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার পক্ষ থেকে সময়সীমা নির্ধারণের ঘটনা এটিই প্রথম।
রবিবারের এই মন্তব্যের কিছুক্ষণ আগে, লেবাননের সরকার ইসরায়েলে সম্ভাব্য হামলা নস্যাৎ করার জন্য সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে। হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর থেকে এটি ছিল প্রথম ঘটনা।
লেবাননের সেনাবাহিনী আটককৃত রকেট ও লঞ্চ প্যাডের ছবি প্রকাশ করে এবং ইসরায়েলে হামলার সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তিকে আটকের কথা জানায়।
সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় সিডন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নাওয়াজ শরিফের কার্যালয় নিরাপত্তা বাহিনীকে “লেবাননকে আরও যুদ্ধে জড়ানোর ষড়যন্ত্র” বানচাল করার আহ্বান জানায়।
তারা জানায়, এই ধরনের পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, লেবাননের রাষ্ট্র তার নিজস্ব বাহিনীর মাধ্যমে ভূখণ্ডের উপর পূর্ণ সার্বভৌমত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যুদ্ধ ও শান্তি সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র অধিকার লেবানন রাষ্ট্রের। অস্ত্র রাখা বা না রাখার সিদ্ধান্তও তাদের।
রবিবারের এই মন্তব্যের উপর তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি হিজবুল্লাহ।
তবে শুক্রবার হিজবুল্লাহ নেতা নাঈম কাসেম বলেন, “আমরা কাউকে নিরস্ত্র হতে দেব না।” বিশেষ করে যখন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এখনও দক্ষিণ লেবাননের কিছু অংশ দখল করে রেখেছে।
১৯৮২ সালে ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর হিজবুল্লাহ গঠিত হয় এবং কয়েক দশক ধরে তারা রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে।
এর মধ্যে ২০০০ সালে ইসরায়েলকে দক্ষিণ লেবানন থেকে বিতাড়িত করা এবং ২০০৬ সালের যুদ্ধে ইসরায়েলের সঙ্গে অচলাবস্থা তৈরি করা উল্লেখযোগ্য।
তবে, অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর হিজবুল্লাহ অনেক নেতাকে হারিয়েছে এবং তাদের সামরিক সরঞ্জামেরও ক্ষতি হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে তাদের দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রবিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় দক্ষিণ লেবাননে ২ জন নিহত হয়েছে।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান নাবাতিয়াহ প্রদেশের হুলা গ্রামে একটি বাড়িতে অন্তত দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, এতে একজন নিহত হয়।
এছাড়া, একটি ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় কাওতারিয়াত-আস-সিয়াদে একটি গাড়িতে হামলা চালানো হয়, যাতে আরও একজন নিহত হয়।
আল জাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি সানাদের যাচাই করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলি বিমান হামলার পর দক্ষিণ লেবাননের ইকলিম আল-টুফ্ফাহ অঞ্চলের আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়ছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে তাদের হামলায় হিজবুল্লাহর অস্ত্র ও অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত এক ইউনিটের উপ-প্রধান নিহত হয়েছে।
তারা আরও জানায়, নিহত ব্যক্তি হিজবুল্লাহর পুনর্গঠনের প্রচেষ্টায় “ব্যাপকভাবে জড়িত” ছিলেন।
শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও ২ জন হিজবুল্লাহ সদস্যকে হত্যার দাবি করেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা