এক সময়ের শিল্পনগরী বাল্টিমোর, আমেরিকার পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত, তার পুরনো গৌরব ফিরে পেতে শুরু করেছে। একসময় অপরাধ আর দারিদ্র্যের কারণে শহরটি পরিচিতি পেলেও, বর্তমানে নতুন করে সাজানো হচ্ছে একে।
বিলাসবহুল হোটেল, অত্যাধুনিক রেস্টুরেন্ট এবং পুরনো বাজারগুলোর সংস্কারের মাধ্যমে শহরটি যেন নতুন করে জেগে উঠছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে শহরগুলো উন্নয়নের পথে হাঁটছে, বাল্টিমোরের এই পরিবর্তন অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে।
বাল্টিমোরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ল্যাট্রোব বিল্ডিং একসময় তরুণ প্রজন্মের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি বিভিন্ন রূপে পরিবর্তিত হয়েছে। অবশেষে, এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।
তবে এখন, ২০১৯ সালে “দ্য ইউলিসিস” নামের একটি অত্যাশ্চর্য হোটেল হিসেবে এটি আবার ফিরে এসেছে। হোটেলের ভেতরের নকশা যেন অতীতের আড়ম্বরকে নতুন করে তুলে ধরেছে।
তবে, বাল্টিমোরের এই পরিবর্তনের শুরুটা সম্ভবত ২০১৭ সালে “সাগামোর পেন্ড্রি বাল্টিমোর” নামের একটি আধুনিক হোটেল উদ্বোধনের মাধ্যমে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এই পরিবর্তনের গতি কিছুটা কমে গেলেও, বর্তমানে নতুন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট খোলার মাধ্যমে শহরটি আবার তার পুরনো রূপে ফিরছে।
শহরের উত্তরে অবস্থিত “হ্যাম্পডেন” এলাকায়, “গেস্টহাউস বাই গুড নেইবার” নামের একটি হোটেলে স্থানীয় শিল্প ও নকশার ছোঁয়া দেখা যায়। এখানে আসা অতিথিরা স্থানীয় কারুশিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন জিনিস দেখতে পান।
খাবার-দাবারের ক্ষেত্রেও বাল্টিমোর নতুনত্ব আনছে। “লিটল ডনাস” নামের একটি রেস্টুরেন্ট, যা ২০২৩ সালে আমেরিকার সেরা রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে, সেখানকার খাবারের স্বাদে যুগোস্লাভিয়ান, মিডওয়েস্ট এবং বাল্টিমোরের সংস্কৃতির মিশ্রণ দেখা যায়।
এখানকার ক্র্যাব প্যানকেক এবং লবস্টার পিরোগি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পুরনো রেস্টুরেন্টগুলোও নতুন আঙ্গিকে নিজেদের উপস্থাপন করছে। “উডবেরি কিচেন” -এর “টাভার্ন অ্যাট উডবেরি কিচেন” সেখানকার স্থানীয় খাবারের ঐতিহ্যকে নতুন করে তুলে ধরেছে।
শেফ স্পাইক গিয়ার্ডের মতে, স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করার ফলে খাবারের স্বাদ আরও উন্নত হয়।
ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলিও সংস্কার করা হচ্ছে, যা শহরের জীবনযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করছে। আঠারো শতকে প্রতিষ্ঠিত “লেক্সিংটন মার্কেট” আধুনিক রূপে ফিরে এসেছে, যেখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খাবারের দোকান রয়েছে।
পুরনো বাজারগুলির মধ্যে অন্যতম “ফেইডলি’স সি ফুড” -ও নতুন স্থানে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
বাজারের আশেপাশে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। “হোলিন্স মার্কেট”-এর কাছে “রুটড রটিসেরি” নামের একটি রেস্টুরেন্ট, যেখানে ফরাসি রান্নার স্বাদ উপভোগ করা যায়।
সবশেষে, “রিস্ট” নামের একটি আধুনিক হোটেল, যা বাল্টিমোর উপদ্বীপের কাছে অবস্থিত, শহরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একটি অংশ। এই অঞ্চলের আধুনিক ভবন, অফিস এবং দোকানগুলি শহরের নতুন চিত্র ফুটিয়ে তোলে।
বাল্টিমোরের এই পরিবর্তন প্রমাণ করে যে, একটি শহরের পুনর্গঠন সম্ভব। পুরনো ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় শহরটি নতুন করে সাজছে, যা বাংলাদেশের শহরগুলোর জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে।
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বিষয়ক পত্রিকা।