পুরুষদের মধ্যে চোখের পাপড়ি কামানোর প্রবণতা বাড়ছে, কারণ তারা নিজেদের “পুরুষালি” দেখাতে চাইছে। সম্প্রতি, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম এবং এক্স-এর মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এই ধরনের ভিডিও দেখা যাচ্ছে, যেখানে পুরুষরা তাদের চোখের খুব কাছাকাছি ব্লেড ব্যবহার করে চোখের পাপড়ি ছোট করছেন বা সম্পূর্ণভাবে কামিয়ে ফেলছেন।
তুরস্ক থেকে নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত বিভিন্ন সেলুনে এই দৃশ্য দেখা গেছে। কেউ কেউ ইলেক্ট্রিক ক্লিপার ব্যবহার করছেন, আবার কেউ সাধারণ কাঁচি দিয়ে কাজটি করছেন।
কিন্তু চোখের পাপড়ি কামানো কি আদৌ নিরাপদ? চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের পরামর্শক ভিকি লি’র মতে, “চোখের পাপড়ি আমাদের চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এটি বাইরের ধুলোবালি এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ থেকে চোখকে রক্ষা করে, চোখের পলক ফেলতে সাহায্য করে এবং চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখে।” তিনি আরও বলেন চোখের পাপড়ি কাটলে বা কামালে চোখের অস্বস্তি হতে পারে এবং চোখের পৃষ্ঠে তীক্ষ্ণ প্রান্ত লেগে থাকার কারণে জ্বালা হতে পারে।
এমনকি চোখের আঘাতের ঝুঁকিও থাকে।
এই প্রবণতা সম্ভবত সমাজে “পুরুষালী মানসিকতা”র উত্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত। সৌন্দর্য সবসময়ই নারীত্বের সঙ্গে জড়িত ছিল।
শিল্পী এবং সাহিত্যিকদের কাজেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে, বিশেষ করে অনলাইনে, পুরুষদের মধ্যে নিজেদের “পুরুষালি” প্রমাণ করার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এই ধারণাকে আরও উস্কে দিচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, মেটা’র প্রধান মার্ক জুকারবার্গ কর্পোরেট জগতে আরও “পুরুষালি মানসিকতা”র পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, নারীদের মধ্যে “নো-মাসকারা” ট্রেন্ডও বাড়ছে, যেখানে তারা তাদের প্রাকৃতিক চোখের পাপড়ি দেখাচ্ছেন।
তবে, গবেষণা সংস্থা মিনটেল-এর মতে, মাসকারা এখনও সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত আই মেকআপ পণ্য।
এই বিষয়ে ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির লিঙ্গ গবেষণা বিভাগের সম্মানীয় অধ্যাপক মেরেডিথ জোন্স সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “একটি সমাজ যত রক্ষণশীল বা ঐতিহ্যবাহী হতে চায়, ততটাই তারা পুরুষ এবং নারীর মধ্যে পার্থক্য তৈরি করতে চায়।
তিনি আরও যোগ করেন, “চোখের পাপড়ি এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কারণ একদিকে যেমন লম্বা, ঘন এবং কালো চোখের পাপড়িকে ‘অতি-নারীত্ব’ হিসেবে দেখা হয়, তেমনই অন্য লিঙ্গের মানুষের মধ্যে এর বিপরীত কিছু খোঁজার প্রবণতা তৈরি হয়।
সুতরাং, চোখের পাপড়ি কামানোর এই নতুন প্রবণতা, পুরুষদের নিজেদের “পুরুষালি” প্রমাণ করার একটি প্রচেষ্টা হতে পারে, যা সমাজের একটি নির্দিষ্ট অংশের সংস্কৃতি এবং মানসিকতার প্রতিফলন।
তবে, চোখের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে, এই ধরনের কাজ করা থেকে বিরত থাকাই ভালো।
তথ্য সূত্র: CNN