ভূমধ্যসাগরের বুকে লুকানো এক রত্ন: গ্রিক দ্বীপ কীয়া – যেখানে ঐতিহ্য আর আধুনিকতা মিলেমিশে একাকার।
গ্রিসের দ্বীপগুলি যেন এক একটি স্বপ্নপুরী। এদের মধ্যে অনেক দ্বীপই পর্যটকদের কাছে পরিচিত, কিন্তু এমন কিছু দ্বীপ আছে যারা এখনো অনেকটাই লোকচক্ষুর অন্তরালে।
এমনই একটি দ্বীপ হলো কীয়া (Kea), যা গ্রিক দ্বীপপুঞ্জের একটি অংশ এবং এথেন্স থেকে খুব কাছেই অবস্থিত। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপত্য, এবং আধুনিক বিলাসবহুলতার মিশ্রণ একে অন্যরকম করেছে।
কীয়া দ্বীপটি “টিজিয়া” নামেও পরিচিত। এথেন্স থেকে এক ঘণ্টার নৌপথ পাড়ি দিলেই এই দ্বীপে পৌঁছানো যায়।
যদিও এটি এথেন্সের খুব কাছে, তবুও বিদেশি পর্যটকদের কাছে এর পরিচিতি তুলনামূলকভাবে কম। এর কারণ সম্ভবত এখানকার স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি এখানকার মানুষের গভীর আকর্ষণ।
কীয়ার মানুষজন যুগ যুগ ধরে কৃষি, পশুপালন এবং মৎস্য শিকারের উপর নির্ভরশীল। সম্ভবত এ কারণেই পর্যটকদের আনাগোনা তাদের খুব একটা আকর্ষণ করে না।
কীয়ার আকর্ষণীয় দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এখানকার শিল্প-ঐতিহ্য। বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় গ্রিক চিত্রশিল্পী অ্যালেকোস ফাসিয়ানোস (Alekos Fassianos) এই দ্বীপটিকে ভালোবাসতেন এবং এখানে নিয়মিত আসতেন।
তাঁর হাতের ছোঁয়ায় দ্বীপের আনাচে কানাচে ফুটে উঠত শিল্পকলার নানা দিক। এখানকার বাড়িগুলোর নকশা, আসবাবপত্র এবং সিরামিকসের ওপর তাঁর আঁকা ছবিগুলো আজও দর্শকদের মুগ্ধ করে।
ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধনে কীয়া যেন এক ভিন্ন জগৎ। এখানে একদিকে যেমন রয়েছে পুরনো পাথরের তৈরি গ্রাম, সংকীর্ণ পথ, আর স্থানীয় সংস্কৃতি, তেমনই অন্যদিকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন রিসোর্টগুলোও পর্যটকদের মন জয় করে।
এখানকার সমুদ্র পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ, যা ডুবুরিদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। বিশেষ করে, “ব্রিটিশ” নামের একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ এখানকার সমুদ্রের নিচে রয়েছে, যা অভিজ্ঞ ডুবুরিদের কাছে “পবিত্র স্থান” হিসেবে পরিচিত।
বর্তমানে, কীয়া দ্বীপে “ওয়ান অ্যান্ড অনলি কীয়া আইল্যান্ড” (One&Only Kéa Island) এর মতো বিলাসবহুল রিসোর্ট তৈরি হয়েছে। এই রিসোর্টগুলোতে অত্যাধুনিক সব সুবিধা রয়েছে, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
এছাড়াও, কীয়া রিট্রিট (Kea Retreat)-এর মতো জায়গাগুলো যোগা ও ধ্যান চর্চার জন্য আদর্শ।
কীয়ার একদিকে যেমন আছে প্রকৃতির অপরূপ শোভা, তেমনই এখানকার স্থানীয় জীবনযাত্রা আজও অনেক মানুষের কাছে অনুকরণীয়। এখানকার স্থানীয় রেস্টুরেন্টগুলোতে (tavernas) ঐতিহ্যবাহী গ্রিক খাবার পাওয়া যায়।
এইসব রেস্টুরেন্টগুলিতে স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি খাবার পরিবেশন করা হয়।
কীয়া দ্বীপটি যেন এক বিরল সমন্বয়। এখানে একদিকে যেমন প্রকৃতির নীরবতা, তেমনি আধুনিক জীবনের ঝলকানিও উপভোগ করা যায়।
এটি একদিকে যেমন একান্তে সময় কাটানোর জায়গা, তেমনই আবার বিলাসিতার স্বাদ নেওয়ারও সুযোগ করে দেয়। যারা গ্রিসের অন্য দ্বীপগুলোর ভিড় এড়িয়ে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে চান, তাদের জন্য কীয়া হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য।
তথ্যসূত্র: ট্রাভেল + লেজার (Travel + Leisure)