ইউরোপে অবৈধভাবে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সংখ্যা কমেছে, তবে বাড়ছে জীবনহানির ঝুঁকি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ইউরোপের সীমান্তগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশের ঘটনা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স-এর দেওয়া তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে ইইউ-এর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
ফ্রন্টেক্সের তথ্য অনুযায়ী, আলবেনিয়া, সার্বিয়া, মন্টেনিগ্রো এবং উত্তর মেসিডোনিয়া হয়ে ইউরোপে প্রবেশের পথগুলোতে এই হ্রাস ছিল সবচেয়ে বেশি, যা প্রায় ৬৪ শতাংশ। এছাড়া, যুক্তরাজ্যে প্রবেশেও হ্রাস দেখা গেছে, যা প্রায় ৪ শতাংশ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জুডিথ সাদারল্যান্ড জানিয়েছেন, অভিবাসনের ধরন আবহাওয়া এবং সংঘাতসহ বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভরশীল হলেও, এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দেয় যে, এটি গত বছরের ধারাবাহিকতা।
গত বছর ইউরোপে অবৈধ সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনা আগের বছরের তুলনায় ৩৮ শতাংশ কমেছিল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, সীমান্ত সুরক্ষার নামে ইইউ-এর নেওয়া পদক্ষেপগুলো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিতে বাধ্য করছে।
ফলে, ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া, পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে মারধর এবং বেলারুশে ফেরত পাঠানো, অথবা ইইউ-এর আশেপাশে বিভিন্ন বন ও মরুভূমিতে আটকে পড়ার মতো ঘটনা বাড়ছে।
ইইউ-এর পক্ষ থেকে লিবিয়া ও তিউনিসিয়ার মতো ইউরোপের বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে, যেখানে অভিবাসীদের ওপর নির্যাতন, যৌন সহিংসতা এবং কারারুদ্ধ করার মতো ঘটনাগুলো ঘটছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জুডিথ সাদারল্যান্ড আরও বলেন, “যদি অভিবাসন প্রত্যাশীদের সংখ্যা কমার পেছনে ইইউ-এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো দায়ী হয়, তবে এটা স্পষ্ট যে, সেই পদক্ষেপগুলোর সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন জড়িত, এবং এতে ইইউও দায়ী।”
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (ইসিএইচআর) নামের একটি সংগঠনও একই উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
তারা মধ্য ভূমধ্যসাগরে অভিবাসী ও শরণার্থীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দুটি অভিযোগ দায়ের করেছে। ইসিএইচআর-এর সিনিয়র লিগ্যাল অ্যাডভাইজার অ্যালিসন ওয়েস্ট বলেছেন, “সংখ্যার এই হ্রাস পাওয়া মানে এই নয় যে, মানুষজন কম হারে স্থানান্তরিত হচ্ছে।
বরং এর অর্থ হলো, লিবিয়া ও তিউনিসিয়ার মতো দেশগুলোতে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তাদের আটকে রাখা হচ্ছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল। আর এতে ইইউ-এর সহযোগিতা ও অনুমোদন রয়েছে।”
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) জানিয়েছে, লিবিয়া ও তিউনিসিয়ার মতো উত্তর আফ্রিকার কিছু দেশ থেকে ছেড়ে আসা নৌযান আটকের সংখ্যা বেড়েছে, যা হয়তো অভিবাসন প্রত্যাশীদের সংখ্যা কমার কারণ হতে পারে।
আইওএম-এর মুখপাত্র জানান, “এই হ্রাস সত্ত্বেও, আমরা অভিবাসীদের মৃত্যু নিয়ে উদ্বিগ্ন, যা আমাদের তথ্য অনুযায়ী এখনও অনেক বেশি।”
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় অন্তত ৫৫৫ জন মারা গেছেন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩,৫০০ জনের বেশি।
আইওএম আরও জানায়, তারা নিরাপদ এবং নিয়মিত অভিবাসন পথের পক্ষে, যা অবৈধ অভিবাসনের ঝুঁকিপূর্ণ বিকল্প হতে পারে।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে প্রায় ৩,৫০০ শিশু মধ্য ভূমধ্যসাগরে ইতালিতে পৌঁছানোর সময় হয় মারা গেছে, না হয় নিখোঁজ হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান