**মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ বন্যা: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা**
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে এক বিধ্বংসী বন্যা দেখা গেছে, যা আবহাওয়াবিদদের ভাষায় ‘অ্যাটমোস্ফিয়ারিক রিভার’ বা বায়ুমণ্ডলীয় নদীর কারণে হয়েছে। এপ্রিলের শুরুর দিকে হওয়া এই বন্যায় টেক্সাস থেকে শুরু করে কেনটাকি পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।
এই ঘটনা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়ে চলা চরম আবহাওয়ার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ, যা শুধু আমেরিকার জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্যই উদ্বেগের কারণ।
আবহাওয়াবিদদের মতে, ‘অ্যাটমোস্ফিয়ারিক রিভার’ হলো বায়ুমণ্ডলের মধ্যে বয়ে যাওয়া জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাসের একটি সরু স্রোত, যা অনেকটা নদীর মতো। এই স্রোত যখন কোনো অঞ্চলে আঘাত হানে, তখন তা ব্যাপক বৃষ্টিপাত ঘটায়।
সাধারণত, এই ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে বেশি দেখা যায়, যেখানে এটি জল সরবরাহ এবং বন্যার একটি প্রধান কারণ। কিন্তু এবার পূর্বাঞ্চলেও এর প্রভাব ছিল মারাত্মক। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে, ফলে এই ধরনের ঘটনাগুলো আরও ঘন ঘন ঘটছে এবং এর তীব্রতাও বাড়ছে।
কেনটাকি, টেনেসী, মিসৌরি এবং আরকানসাসে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ব্যাপক বন্যা হয়। কিছু কিছু স্থানে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে ৩০ সেন্টিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা সেখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত করে দেয়।
কেনটাকিতে ৫০০-এর বেশি ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বহু রাস্তাঘাট জলের নিচে তলিয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য এই ঘটনাটি একটি সতর্কবার্তা বহন করে। আমাদের দেশেও বর্ষাকালে প্রায়ই বন্যা দেখা যায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এর তীব্রতা বাড়ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে ‘অ্যাটমোস্ফিয়ারিক রিভার’-এর প্রভাব পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ে ভিন্ন। এর কারণ হলো, এখানকার জলীয় বাষ্প আসে ক্যারিবিয়ান সাগর এবং মেক্সিকো উপসাগর থেকে, যেখানে উষ্ণতা বেশি থাকার কারণে বাষ্পীভবনের পরিমাণও বেশি থাকে।
এছাড়াও, পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টির জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ ধরনের আবহাওয়ার, যেমন ফ্রন্ট বা উষ্ণ-শীতল বায়ুর মিলনস্থল। এই ফ্রন্টগুলো যখন স্থির থাকে, তখন তা ভারী বৃষ্টিপাত ঘটায়, যা বন্যার কারণ হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলো থেকে আসা জলীয় বাষ্প ‘অ্যাটমোস্ফিয়ারিক রিভার’-এর প্রধান উৎস এবং উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এই অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বাড়ছে।
অতএব, যুক্তরাষ্ট্রের এই বন্যা বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশেও ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে।
তাই, আমাদের এখনই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি, বন্যা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উন্নতি করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন