বৈদ্যুতিক গাড়ির (Electric Vehicle – ইভি) বাজারে চীনের একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারের কারণে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সৌর প্যানেলের দাম বাড়ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের শুল্ক নীতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সৌর শিল্পকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
চীন বিশ্বে সৌর প্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যেমন পলিসিলিকন, কাঁচ এবং সৌর কোষের উৎপাদনে প্রায় ৮০% পর্যন্ত একচেটিয়া অধিকার ধরে রেখেছে। এই কারণে, ট্রাম্প প্রশাসন চীনের তৈরি সৌর প্যানেলের ওপর শুল্ক আরোপ করে।
এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সৌর প্যানেলের দাম বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ওহাইও রাজ্যের বাসিন্দা মাইক সামারস জানান, তিনি তার বাড়িতে সৌর প্যানেল লাগানোর জন্য ৩৯,০০০ ডলার বিনিয়োগ করেছেন এবং এর জন্য প্রায় ১০,০০০ ডলার ট্যাক্স ক্রেডিট পাবেন।
তবে, সৌর প্যানেলের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক গ্রাহক তাদের পরিকল্পনা স্থগিত করতে বাধ্য হচ্ছেন। ক্লিভল্যান্ড ভিত্তিক সোলার ইন্সটলার ইয়েলোলাইটের সহকারী বিক্রয় ব্যবস্থাপক ব্রায়ান ডি’পাওলো বলেন, “এই শুল্কের কারণে গ্রাহকদের জন্য সৌর প্যানেলের দাম বাড়ছে এবং আমাদের ব্যবসাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সৌর প্যানেলের উপাদান তৈরির জন্য ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট’-এর অধীনে পরিচ্ছন্ন শক্তি খাতে বিশাল পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু চীনের উৎপাদন ক্ষমতার সঙ্গে এটি এখনো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের কারণে সৌর প্যানেলের দাম বাড়তে থাকবে, যা সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে দেবে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির জলবায়ু স্কুলের ডিন অ্যালেক্সিস আব্রামসন বলেছেন, আবাসিক সৌর বিদ্যুতের দাম বাড়বে এবং ছোট ও মাঝারি আকারের সৌর প্যানেল সরবরাহকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অন্যদিকে, সৌর শক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচ্ছন্ন শক্তি উৎস, যা কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে। ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, প্রযুক্তির উন্নতি এবং দাম কমার কারণে গত কয়েক বছরে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সোলার এনার্জি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যাবিগেল রস হপার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকে সরবরাহ শৃঙ্খল পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও যোগ করেন, নীতিতে আকস্মিক পরিবর্তন বিনিয়োগ এবং চাকরির সুযোগকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, যারা তাদের বাড়িতে সৌর প্যানেল লাগানোর কথা ভাবছেন, তাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কারণ, বাণিজ্য নীতি পরিবর্তন হতে থাকলে, ভবিষ্যতে দাম আরও বাড়তে পারে।
বর্তমানে, বাংলাদেশের বাজারেও সৌর বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। বিদ্যুতের বিকল্প উৎস হিসেবে সৌর শক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে, যা সৌর বিদ্যুতের বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস