যুক্তরাষ্ট্রে বিপন্নপ্রায় প্রজাতিদের সুরক্ষা দুর্বল করার একটি প্রস্তাবিত পদক্ষেপ পরিবেশবিদদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হল, বিপন্নপ্রায় প্রাণী ও তাদের আবাসস্থলের সুরক্ষাকবচ তুলে নেওয়া।
পরিবেশবাদীরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে বনভূমি ধ্বংস, খনিজ সম্পদ উত্তোলন এবং উন্নয়নের নামে ধ্বংসযজ্ঞ চললে অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির দিকে আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘এনডেঞ্জার্ড স্পিসিজ অ্যাক্ট’-এর (Endangered Species Act) অধীনে, ‘ক্ষতি’ শব্দটির একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা রয়েছে। এই আইনে, কোনো প্রাণীর আবাসস্থল পরিবর্তন বা ধ্বংস করাকে ক্ষতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পরিবেশ বিষয়ক সংগঠনগুলোর মতে, আবাসস্থল ধ্বংসই মূলত প্রজাতি বিলুপ্তির প্রধান কারণ। নতুন প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, আবাসস্থল পরিবর্তনকে ক্ষতির সংজ্ঞা হিসেবে ধরা যাবে না।
কারণ, এতে কোনো প্রজাতির প্রতি সরাসরি আঘাতের উদ্দেশ্যে কাজ করা হয় না। তবে, পরিবেশবিদরা বলছেন, ‘আঘাত’ শব্দটির বর্তমান সংজ্ঞায় এমন সব কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা কোনো না কোনোভাবে প্রজাতিদের ক্ষতি করে।
এমনকি সুপ্রিম কোর্টও এই সংজ্ঞা বহাল রেখেছে।
এই প্রস্তাবিত পরিবর্তনের ফলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক আইনটির কার্যকারিতা দুর্বল হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, পাহাড়ি বনভূমি ধ্বংস করলে সেখানে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রজাতির পেঁচা এবং ফ্লোরিডার প্যান্থারের মতো প্রাণীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
কিন্তু নতুন নিয়ম কার্যকর হলে, কোনো ব্যক্তি যদি বনের গাছ কাটেন বা সেখানে উন্নয়নের কাজ করেন, তাহলে তিনি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তার কাজের ফলে কোনো বিপন্ন প্রজাতির ক্ষতি হয়নি, তাহলে তাকে বাধা দেওয়া যাবে না।
এই প্রস্তাবটি বৃহস্পতিবার ফেডারেল রেজিস্টারে প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর পরেই, জনসাধারণের কাছ থেকে তাদের মতামত জানানোর জন্য ৩০ দিনের সময় পাওয়া যাবে।
পরিবেশ বিষয়ক কর্মীরা জানিয়েছেন, প্রস্তাবটি গৃহীত হলে তারা এর বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন। তাদের মতে, এই প্রস্তাবনাটি ‘বিপন্নপ্রায় প্রজাতিদের রক্ষা ও পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে গত অর্ধ শতাব্দীর অর্জিত সাফল্যের প্রতি চরম আঘাত’।
এর ফলে, সাদা ঈগল, ধূসর নেকড়ে, ফ্লোরিডার ম্যানাটি এবং হাম্পব্যাক তিমি সহ আরও অনেক প্রাণী ক্ষতির শিকার হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রস্তাবনাটি এমন এক সময়ে আনা হচ্ছে, যখন হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মতো অঞ্চলে অনেক বিপন্ন প্রজাতির অস্তিত্ব চরম হুমকির মুখে। ন্যাশনাল ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফাউন্ডেশন-এর তথ্য অনুযায়ী, হাওয়াই দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশি বিপন্ন প্রজাতি বাস করে।
এমনকি দেশটির মোট বিপন্ন প্রজাতির প্রায় ৪০ শতাংশই হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে ভূমি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের ছোট ছোট বাস্তুতন্ত্রের কারণে, এই ধরনের সুরক্ষা অপসারণ হলে সেখানকার জীববৈচিত্র্যের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
উদাহরণস্বরূপ, উপকূলীয় বালুকাময় অঞ্চলে পরাগ সংযোগের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনকারী ক্ষুদ্র মৌমাছি এবং সবুজ কচ্ছপের মতো প্রজাতিগুলো তাদের আবাসস্থল হারাতে পারে।
পরিবেশবিদদের মতে, আবাসস্থল হল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আবাসস্থল ছাড়া কোনো প্রজাতি পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়, আর পুনরুদ্ধার না হলে, কেবল বিলুপ্তিই অনিবার্য।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস