ক্যালিফোর্নিয়ার সিয়েরা নেভাডা পর্বতমালায় পৃথিবীর ভূত্বকের গভীরে একটি বিরল পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের নতুন গবেষণা অনুসারে, এই অঞ্চলের নিচে ভূত্বক ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে, যা ‘লিথোস্ফেরিক ফাউন্ডিং’ নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়া।
এই আবিষ্কার পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন এবং ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারে। ভূকম্পনবিদ এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা গত কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলের ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করছিলেন।
বিশ্লেষণের সময় তারা গভীর ভূমিকম্পের একটি অস্বাভাবিক ধারা খুঁজে পান। সাধারণত, এই অঞ্চলে ভূমিকম্প ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ থেকে ১৮ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা দেখতে পান যে, সিয়েরা নেভাডার কেন্দ্রস্থলে ভূমিকম্পগুলো প্রায় ২০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত হচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ক্রিপস ইনস্টিটিউশন অফ ওশেনোগ্রাফির গবেষক ডেবোরা কিলব বলেন, “২০ কিলোমিটারের বেশি গভীরতায় ভূমিকম্প হওয়াটা খুবই অস্বাভাবিক। সাধারণত ভূত্বকের ভূমিকম্পগুলোতে এমনটা দেখা যায় না।”
কিলব এই তথ্য ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোল্ডারের গবেষক ভেরা শুলতে-পেলকুমের নজরে আনেন, যিনি এই অঞ্চলের শিলার গঠন নিয়ে গবেষণা করছিলেন।
গবেষকরা ‘রিসিভার ফাংশন অ্যানালাইসিস’ নামক একটি কৌশল ব্যবহার করে সিয়েরা নেভাডার অভ্যন্তরের চিত্র তৈরি করেন। এই পদ্ধতিতে ভূমিকম্প তরঙ্গ ব্যবহার করে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন চিহ্নিত করা হয়।
তারা দেখতে পান যে, পর্বতমালার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে পৃথিবীর ভূত্বক ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটি ‘লিথোস্ফেরিক ফাউন্ডিং’ নামে পরিচিত, যেখানে পৃথিবীর বাইরের স্তর ভেতরের স্তরে প্রবেশ করে।
গবেষকরা ধারণা করছেন, এই প্রক্রিয়া এখনো চলছে এবং এটি উত্তর দিকেও বিস্তৃত হচ্ছে। শুলতে-পেলকুম বলেন, “আমরা যখন আমাদের গবেষণার ফলগুলো তুলনা করি, তখন দেখি যে আমার শিলার গঠন এবং তার গভীর ভূমিকম্প একই অঞ্চলে ঘটছে।”
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই গবেষণা মহাদেশ কীভাবে গঠিত হয়েছে, সেই সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারে। শুলতে-পেলকুম আরও যোগ করেন, এই আবিষ্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এই ধরনের প্রক্রিয়াগুলো চিহ্নিত করতে এবং ভূমিকম্প সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
পৃথিবীর উপরিভাগের স্তর, যা ‘লিথোস্ফিয়ার’ নামে পরিচিত, তা কঠিন ভূত্বক এবং গুরুমন্ডলের উপরের অংশ নিয়ে গঠিত। এই স্তরে মহাসাগরের নিচের পাতলা এবং ঘন স্তর এবং মহাদেশীয় ভূত্বকও রয়েছে।
শুলতে-পেলকুম ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে এই স্তরগুলো একসাথে বিদ্যমান এবং মহাদেশগুলো উপরে অবস্থান করছে, তা এখনো একটি রহস্য।
লিথোস্ফেরিক ফাউন্ডিং হলো একটি প্রক্রিয়া, যেখানে ঘন উপাদানগুলো নিচের দিকে চলে যায় এবং কম ঘন উপাদানগুলো উপরে উঠে আসে, যার ফলে ভূমি গঠিত হয়।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সিয়েরা নেভাডার দক্ষিণে প্রায় ৩ থেকে ৪ মিলিয়ন বছর আগে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল।
এই গবেষণা ভূমিকম্প এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারে। জর্জিয়া টেক-এর গবেষক মিচেল ম্যাকমিলান বলেন, “এই গবেষণাটি বিভিন্ন তথ্যকে একত্রিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।”
সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের আরও গবেষণা পৃথিবীর বিবর্তন সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে। যদি লিথোস্ফেরিক ফাউন্ডিং প্রক্রিয়া চলতে থাকে, তাহলে এই অঞ্চলের ভূদৃশ্যের পরিবর্তন হতে পারে।
ভূত্বকের এই ধরনের পরিবর্তনগুলি সাধারণত বিশাল পর্বতমালা বা অন্যান্য ভূ-গঠনের নিচে ঘটে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালায়ও এই ধরনের প্রক্রিয়া চলছে বলে ধারণা করা হয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন