দীর্ঘদিন ধরে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করা যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা আবার শুরু হয়েছে। আগামী শনিবার ইতালির রাজধানী রোমে উভয় দেশের প্রতিনিধিরা দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।
প্রথম দফা আলোচনা গত সপ্তাহে ওমানে অনুষ্ঠিত হয়। খবরটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক গুরুত্ব বহন করছে, কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা এবং বিশ্ব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো।
২০১৫ সালে ইরান ও বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি পরমাণু চুক্তি (Joint Comprehensive Plan of Action – JCPOA) স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করা এবং এর বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া।
কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন। এরপর ইরান আবার তাদের পরমাণু কার্যক্রম জোরদার করতে শুরু করে। তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে, যা বোমা তৈরির কাছাকাছি পর্যায়ের।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ইরানের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি চাইছেন, যা আগের ২০১৫ সালের চুক্তির চেয়ে আরও শক্তিশালী হবে। তবে, আলোচনার প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন সময়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের বক্তব্যে ভিন্নতা দেখা গেছে।
কেউ কেউ ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন, আবার কেউ কেউ আগের চুক্তির মতোই শুধু ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করার কথা বলছেন।
ইরান অবশ্য তাদের পরমাণু কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করে আসছে। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তাদের অধিকার এবং এ বিষয়ে কোনো আপস করা হবে না।
তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সুস্পষ্ট প্রস্তাব চাইছে এবং আলোচনার ক্ষেত্রে কিছু ‘রেড লাইন’ (Red Lines) নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো বিষয় আলোচনায় আনা যাবে না।
আলোচনা প্রসঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি (Ayatollah Ali Khamenei) সতর্ক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা নিয়ে তারা ‘অতিরিক্ত optimisitic’ (আশাবাদী) বা ‘pessimistic’ (হতাশ) নন।
অন্যদিকে, ইসরায়েল (Israel) শুরু থেকেই ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তারা চায়, ইরান যেন কোনোভাবেই পরমাণু বোমা তৈরি করতে না পারে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu) বলেছেন, তারা ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে দেবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনা শুরুর বিষয়টি ইসরায়েলের জন্য খুব একটা সুখকর ছিল না।
আলোচনার বিষয়টি এমন এক সময়ে সামনে এসেছে, যখন ইসরায়েল মনে করছে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা করা প্রয়োজন। তবে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ট্রাম্প ইসরায়েলকে এখনই এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে নিষেধ করেছেন।
তিনি চান, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটির সমাধান হোক।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যেকার এই আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলস্বরূপ মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।
এখন সবার দৃষ্টি রোমের দিকে, যেখানে উভয় পক্ষ তাদের আলোচনা চালিয়ে যাবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)