বাবা-মায়ের প্রথম একাকী বিমানযাত্রা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক অভিভাবকের প্রথমবার একা বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা থাকে, যা তাদের জন্য কিছুটা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। আমাদের সমাজে, যেখানে পরিবারের প্রতি গভীর টান বিদ্যমান, সেখানে বয়স্কদের ভ্রমণ আরও বেশি মনোযোগের দাবিদার।
তাদের ভ্রমণকে সহজ ও আনন্দ-দায়ক করতে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য। এখানে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা দেওয়া হলো, যা আপনার বাবা-মায়ের একাকী বিমানযাত্রাকে আরও আরামদায়ক করে তুলবে:
১. পাওয়ার ব্যাংক ও চার্জিং অ্যাডাপ্টার:
বর্তমান ডিজিটাল যুগে, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা অন্যান্য গ্যাজেট অপরিহার্য। বিমানবন্দরে অপেক্ষা করার সময় অথবা বিমানে বসে থাকার সময় ফোন চার্জ দেওয়াটা খুব দরকারি।
তাই, একটি ভালো মানের পাওয়ার ব্যাংক এবং চার্জিং অ্যাডাপ্টার সঙ্গে রাখা আবশ্যক। বাজারে বিভিন্ন ধরনের পাওয়ার ব্যাংক পাওয়া যায়, যা সহজে বহনযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য।
২. আরামদায়ক হেডফোন:
বিমানে বসে মুভি দেখা, গান শোনা অথবা পছন্দের অডিওবুক শোনার জন্য একটি ভালো হেডফোন-এর বিকল্প নেই। নয়েজ ক্যানসেলেশন (Noise Cancellation) প্রযুক্তিসম্পন্ন হেডফোন বাইরের আওয়াজ কমায়, যা ভ্রমণকে আরও শান্ত ও উপভোগ্য করে তোলে।
৩. ছোট ব্যাগ বা কোমরের ব্যাগ:
ভিসা, পাসপোর্ট, টিকিট, আইডি কার্ড, নগদ টাকা, জরুরি ওষুধ—এগুলো হাতের কাছে রাখা দরকার। একটি ছোট ব্যাগ বা কোমরের ব্যাগ এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি নিরাপদে রাখতে সাহায্য করে।
এই ধরনের ব্যাগগুলি সহজে বহন করা যায় এবং ভ্রমণের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
৪. হ্যান্ড লাগেজ:
ছোট্ট একটি হ্যান্ড লাগেজ-এ জরুরি ঔষধ, অতিরিক্ত কাপড়, হালকা খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় সিট-এর উপরের তাকে অথবা সিটের নিচে এই ব্যাগ রাখা সুবিধাজনক।
৫. ট্রলি ব্যাগ:
বাবা-মায়ের জন্য একটি ভালো মানের ট্রলি ব্যাগ নির্বাচন করুন, যা সহজে বহনযোগ্য এবং যথেষ্ট জায়গা সম্পন্ন। ট্রলি ব্যাগে চাকা থাকলে বিমানবন্দরে হাঁটাচলার সুবিধা হয়।
৬. এয়ারট্যাগ:
বর্তমান সময়ে, লাগেজ হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতে এয়ারট্যাগ-এর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। এই ছোট ডিভাইসটি ব্যাগের সঙ্গে যুক্ত করে তার অবস্থান জানা যায়, যা মানসিক শান্তি দেয়।
৭. পায়ের জন্য আরামদায়ক ব্যবস্থা:
দীর্ঘ ভ্রমণের সময় পায়ের ফোলাভাব কমাতে এবং আরাম পেতে ফুট হ্যামক বা পায়ের জন্য বিশেষ সাপোর্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি সিটে বসে পা এলিয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে।
৮. আই মাস্ক ও ইয়ারপ্লাগ:
ঘুমের ব্যাঘাত কমাতে আই মাস্ক এবং ইয়ারপ্লাগ-এর জুড়ি নেই। বিমানের আলো এবং বাইরের শব্দ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে আরামদায়ক ঘুমের জন্য এগুলো খুবই উপযোগী।
৯. আরামদায়ক জুতো:
বিমানবন্দরে হাঁটাচলার সুবিধার জন্য আরামদায়ক জুতো পরা উচিত। স্পোর্টস শু অথবা হালকা ও সহজে পরার মতো জুতো ভ্রমণের জন্য সেরা।
১০. টুথব্রাশ সুরক্ষা:
ভ্রমণের সময় স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা জরুরি। টুথব্রাশ-এর জন্য একটি সুরক্ষা কভার ব্যবহার করা যেতে পারে, যা এটিকে জীবাণুমুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
১১. পোশাক ভাঁজ করার যন্ত্র:
ভ্রমণের সময় কাপড়ে ভাঁজ পড়া একটি সাধারণ সমস্যা। পোশাক ভাঁজ করার জন্য একটি ছোট স্টিমার সঙ্গে রাখা যেতে পারে, যা কাপড়ের ভাঁজ দূর করে এবং পরিপাটি রাখতে সাহায্য করে।
১২. ত্বকের যত্ন সামগ্রী:
শুষ্ক ত্বক বা অন্যান্য ত্বকের সমস্যা থেকে বাঁচতে ত্বকের যত্নের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সঙ্গে রাখা উচিত। ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন এবং ঠোঁটের বাম-এর মতো জিনিসগুলি ভ্রমণের সময় ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
উপসংহার
আপনার বাবা-মায়ের জন্য একটি আরামদায়ক ও নিরাপদ ভ্রমণের ব্যবস্থা করা আপনার দায়িত্ব। ভ্রমণের আগে এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করে তাদের যাত্রা আরও আনন্দ-দায়ক করে তুলুন।
তাদের ভালো থাকা এবং নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোই আপনার প্রধান লক্ষ্য হোক।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লিজার