মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আলঝাইমার রোগের গবেষণা তহবিল নিয়ে অনিশ্চয়তা: বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টায় এর প্রভাব

আলঝাইমার রোগ একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ, যা স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে আনে। বিশ্বজুড়ে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই রোগটি দ্রুত বাড়ছে, এবং এর প্রভাব শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়েই নয়, বরং স্বাস্থ্যখাতেও বিশাল। বাংলাদেশেও এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে, যা আমাদের সমাজের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (এনআইএইচ) আলঝাইমার রোগের গবেষণা খাতে অর্থায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়া বা হ্রাস পাওয়ার কারণে, চিকিৎসা এবং নতুন ঔষধ আবিষ্কারের পথে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে, রোগীদের চিকিৎসা এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফ্লোরিডার বাসিন্দা জাহিদি বারগোস রিবোট এবং তার স্বামী ফ্রান্সিসকো রিওসের জীবন আলঝাইমার রোগের সঙ্গে কাটছে। ফ্রান্সিসকোর স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে, এবং জাহিদি জানেন যে তাদের একসঙ্গে কাটানো সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। তারা দুজনেই এখন একসঙ্গে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তবে গবেষণার অর্থায়ন কমে গেলে তাদের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়বে। ফ্রান্সিসকো একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নিচ্ছেন, যেখানে তিনি নতুন একটি ঔষধ গ্রহণ করছেন। কিন্তু, এই গবেষণা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের পুনর্গঠন এবং তহবিল পর্যালোচনা চলছে। এর ফলস্বরূপ, এনআইএইচ-এর অধীনে থাকা গবেষণা প্রকল্পগুলোর অনুদান হঠাৎ করে বাতিল করা হচ্ছে, অথবা তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মার্চ মাসে, ৩৫টি আলঝাইমার গবেষণা কেন্দ্রের মধ্যে ১৪টির তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

এই তহবিল কমানোর সিদ্ধান্তের ফলে, গবেষকরা নতুন গবেষণা শুরু করতে বা তাদের গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সমস্যায় পড়ছেন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাইকেল গ্রিসিয়াস বলেছেন, “আলঝাইমার রোগ একটি রাজনৈতিক বিষয় নয়। এটি সব রাজ্যের মানুষকে প্রভাবিত করে। অথচ, এই রোগের গবেষণায় অর্থায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে।

অন্যদিকে, যারা এই তহবিল কমানোর পক্ষে বলছেন, তাদের যুক্তি হলো, সরকারের উচিত “অপ্রয়োজনীয় ব্যয়” হ্রাস করা এবং অর্থায়নে আরও বেশি দক্ষতা আনা। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলঝাইমার রোগের গবেষণা খাতে অর্থ কমানো একটি খারাপ বিনিয়োগ। কারণ, এই রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যখাতে বিশাল খরচ কমিয়ে আনতে পারে।

বর্তমানে, অনেক গবেষণা কেন্দ্র তাদের ফেডারেল তহবিলের নবায়নের জন্য অপেক্ষা করছে। যদি এই তহবিলগুলো পাওয়া না যায়, তবে রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ কমে যাবে এবং নতুন ঔষধ আবিষ্কারের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে। এমনকি, কিছু গবেষণা প্রকল্প বন্ধও হয়ে যেতে পারে।

ক্যালিফোর্নিয়া ডেভিস বিশ্ববিদ্যালয়ের আলঝাইমার গবেষণা কেন্দ্রের একটি প্রকল্পের তহবিল বাতিল করা হয়েছিল, কারণ এতে “বৈচিত্র্য” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে, পরে আপিল করার পর সেই তহবিল পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। তবে, এর ফলে গবেষকদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়েছে।

বর্তমানে, এনআইএইচ ঘোষণা করেছে যে তারা বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রোগ্রাম এবং ইসরায়েলি সংস্থাগুলির বয়কটগুলির সঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির গবেষণা তহবিল বাতিল করবে। এই ধরনের পদক্ষেপগুলি বিজ্ঞান এবং গবেষণার অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

তবে, সবকিছু সত্ত্বেও, জাহিদি এবং ফ্রান্সিসকো তাদের জীবনকে ভালোবাসতে এবং প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে চান। তারা আশা করেন, গবেষণা অব্যাহত থাকবে এবং আলঝাইমার রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফলতা আসবে।

আলঝাইমার রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গবেষণা এবং উন্নয়ন অব্যাহত রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বজুড়ে সরকার এবং সংস্থাগুলোর উচিত এই গুরুত্বপূর্ণ রোগের গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহ করা, যাতে আমরা একটি সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে পারি।

তথ্য সূত্র: CNN