পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ আফ্রিকা, শান্তির দূতকে স্মরণ। আফ্রিকা মহাদেশে ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের কাছে পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন এক বিশেষ ভালোবাসার মানুষ।
তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা মহাদেশে। দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার কথা আজও স্মরণ করেন সেখানকার মানুষজন।
শুধু তাই নয়, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি স্থাপন এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের উপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শোষণ বন্ধের বিষয়ে তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২০১৩ সালে পোপ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ফ্রান্সিস আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সফর করেন। তাঁর আগের পোপের চেয়ে সাতটি বেশি দেশ তিনি ভ্রমণ করেছেন।
বিশেষ করে, ২০১৫ সালে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের রাজধানী বাঙ্গুইয়ে তাঁর সফর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানকার একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় তিনি যান এবং সেখানকার ইমামের সঙ্গে একটি মসজিদে প্রবেশ করেন।
সেখানে তিনি ঘৃণা, প্রতিশোধ এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলেন, যা ধর্ম বা ঈশ্বরের নামে সংঘটিত হয়। তাঁর এই পদক্ষেপ সাম্প্রদায়িক বিভেদ দূর করতে সাহায্য করেছিল।
পোপ ফ্রান্সিসের মানবিক দিকটি সবসময় ফুটে উঠেছে। দক্ষিণ সুদানে যুদ্ধরত নেতাদের তিনি শান্তি ও আলোচনার টেবিলে বসতে উৎসাহিত করেছিলেন।
এমনকি তিনি তাঁদের পা পর্যন্ত চুম্বন করেছিলেন, যা ছিল তাঁর নম্রতা ও সেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আফ্রিকার দরিদ্র এলাকাগুলোতে তাঁর মানবিক সহায়তা ছিল বিশেষভাবে প্রশংসিত।
কেনিয়ার একটি বস্তিতে তিনি দরিদ্র মানুষের প্রতি তাঁর গভীর সহানুভূতির কথা জানিয়েছিলেন। মোজাম্বিকের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন।
তবে পোপ ফ্রান্সিসের কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপে আফ্রিকার রক্ষণশীল চার্চের মধ্যে ভিন্নমত দেখা গেছে। তিনি সমকামী যুগলদের আশীর্বাদ করার অনুমতি দিলে অনেক বিশপ এর বিরোধিতা করেন।
তাঁরা মনে করেন, আফ্রিকার মানুষের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
পোপ ফ্রান্সিসের সময়েই আফ্রিকায় ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে আফ্রিকার ৫৪টি দেশে প্রায় ২৮ কোটির বেশি ক্যাথলিক বাস করেন, যা ২০১৩ সালের তুলনায় অনেক বেশি।
এই ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কাছে পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন এক অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি শুধু ধর্মগুরু ছিলেন না, বরং সমাজের প্রান্তিক মানুষের জন্য ছিলেন একজন সত্যিকারের বন্ধু।
পোপ ফ্রান্সিস তাঁর দায়িত্ব পালনকালে আফ্রিকার মানুষের প্রতি যে গভীর ভালোবাসা ও সম্মান দেখিয়েছেন, তা আজও তাদের হৃদয়ে অম্লান হয়ে আছে।
তাঁর প্রয়াণে আফ্রিকার ক্যাথলিক সম্প্রদায় একজন মহান নেতার অভাব অনুভব করছে, যিনি ছিলেন শান্তি ও ঐক্যের প্রতীক।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস