হারানো জিনিস খুঁজে বের করা: ব্রিটেনের ‘ধাতু সন্ধানকারী’ স্বেচ্ছাসেবকদের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ কিছু মানুষ আছেন, যারা অন্যের দুঃখ-কষ্টে পাশে দাঁড়াতে ভালোবাসেন।
ব্রিটেনের তেমনই কিছু মানুষ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন অন্যের হারানো জিনিস খুঁজে বের করার জন্য। এদের বলা হয় ‘ধাতু সন্ধানকারী’।
আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় এরা খুঁজে ফেরেন মূল্যবান ধাতু, গয়না, এমনকি স্মৃতিবিজড়িত অন্য জিনিসপত্রও। এই কাজে তারা এতটাই পারদর্শী যে, তাদের ‘পঞ্চম জরুরি পরিষেবা’ হিসেবেও ডাকা হয়।
যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর প্রায় ৭.৯ বিলিয়ন জিনিস হারিয়ে যায়। এই তথ্য জানা যায় একটি গবেষণা থেকে।
আর এই হারানো জিনিস খুঁজে বের করার পেছনে মানুষ তাদের জীবনের প্রায় ১১০ দিন ব্যয় করে। এই বিপুল পরিমাণ জিনিস খুঁজে বের করতে এগিয়ে আসে ন্যাশনাল রিং রিকভারি সার্ভিস (এনআরআরএস)।
২০১২ সালে মোর্লে হাওয়ার্ড নামের এক ব্যক্তি এই সেবার সূচনা করেন। প্রথমে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজটি শুরু করলেও, পরে স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দল তৈরি করেন।
এই দলের সদস্যরা এখন সারা যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন এবং মানুষের হারানো জিনিস খুঁজে বের করতে সাহায্য করেন।
মর্লে হাওয়ার্ডের এই কাজের পেছনে রয়েছে এক গভীর আবেগ। একবার তিনি সমুদ্র সৈকতে একটি হারানো আংটি খুঁজে বের করে দেন।
আংটিটি ছিল সদ্য বিবাহিত এক ব্যক্তির। হাওয়ার্ড বলেন, “আমি চোখে জল ধরে রাখতে পারিনি। কারণ, আমার বাবার বিয়ের আংটি হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতি আমি বুঝি।”
এই ঘটনার পর তিনি অনলাইনে এর বিষয়ে জানান এবং অনেকের কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়া জিনিস খুঁজে বের করার অনুরোধ পান। সেই থেকেই শুরু।
এনআরআরএস-এর সদস্যরা এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০টি জিনিস খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছেন এবং তাদের সাফল্যের হার প্রায় নব্বই শতাংশ।
এই দলের স্বেচ্ছাসেবকরা কোনো পারিশ্রমিক নেন না। তবে, কেউ যদি তাদের সাহায্য করতে চায়, তবে তারা একটি দাতব্য সংস্থায় অর্থ দান করতে পারেন।
ডারেন উইলস নামের একজন সদস্য এই দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি প্রায় ২৯৩ জন মানুষকে তাদের হারানো জিনিস খুঁজে পেতে সাহায্য করেছেন।
একবার তিনি সমুদ্র সৈকত থেকে একটি আংটি খুঁজে বের করেন, যেখানে তার প্রয়াত ভাইয়ের স্মৃতিচিহ্ন ছিল।
এই ঘটনাটি সেই ব্যক্তির জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। উইলস জানান, “আমি সবসময় ডারেনের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। এটা শুধু একটা আংটি ছিল না, আমার ভাইয়ের একটা অংশ ছিল, যা আমরা আবার ফিরে পেয়েছিলাম।”
হারানো জিনিস খুঁজে বের করার কাজটি সহজ নয়। গভীর রাতে, প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে তাদের কাজ করতে হয়।
অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে কাদামাটি খুঁড়তে হয়। কিন্তু তাদের এই কষ্টের পেছনে থাকে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর আনন্দ।
কোনো মূল্যবান জিনিস খুঁজে পাওয়ার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো—এই কাজটি তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে।
এনআরআরএস-এর সদস্যরা এখন ব্রিটেনের প্রতিটি শহর ও গ্রামে তাদের সেবা পৌঁছে দিতে চান।
তাদের লক্ষ্য হলো, যেকোনো মানুষ যেন সহজে তাদের সাহায্য পেতে পারে। তাদের এই মহৎ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
তথ্য সূত্র: The Guardian