আধুনিক জীবনে ব্যস্ততা বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে মানসিক চাপ। এই চাপ মোকাবিলায় মানুষ এখন বিভিন্ন উপায় খুঁজছে, যার মধ্যে অন্যতম একটি হলো প্রযুক্তি নির্ভর অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ ব্যবহার করা।
বর্তমানে বাজারে এমন কিছু অ্যাপ পাওয়া যাচ্ছে, যা ব্যবহারকারীদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে গেমের মতো কৌশল ব্যবহার করে। এই ধরনের অ্যাপগুলো ‘গ্যামিফাইড সেলফ-কেয়ার অ্যাপ’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই ধরনের কয়েকটি অ্যাপের কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
গ্যামিফিকেশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে খেলা বা গেমের উপাদান ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর আগ্রহ বাড়ানো হয় এবং তাদের কোনো কাজ করতে উৎসাহিত করা হয়। সেলফ-কেয়ার অ্যাপগুলোতেও একই কৌশল ব্যবহার করা হয়।
ব্যবহারকারীদের ভালো অভ্যাস তৈরি করতে, যেমন – পর্যাপ্ত পানি পান করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, বা ঘুমের অভ্যাস তৈরি করতে এই অ্যাপগুলো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, পুরষ্কার এবং ভার্চুয়াল জগতের অবতারের মতো আকর্ষণীয় উপাদান ব্যবহার করে। বর্তমানে সেলফ-কেয়ার অ্যাপের বাজার বেশ বড়।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী এই বাজারের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০৩৩ সাল নাগাদ ১৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।
কিন্তু গ্যামিফাইড সেলফ-কেয়ার অ্যাপগুলো কি সত্যিই আমাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে? সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে চারটি ভিন্ন ধরনের অ্যাপ পরীক্ষা করে এর কার্যকারিতা যাচাই করা হয়েছে।
অ্যাপগুলো হলো – Finch, Habitica, Ahead এবং Pokémon Sleep।
Finch অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের একটি ভার্চুয়াল পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে ভালো অভ্যাস তৈরি করতে উৎসাহিত করে। ব্যবহারকারী যখন ভালো কাজ করেন, তখন তার ভার্চুয়াল প্রাণীটি খুশি হয় এবং বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারে অংশ নেয়।
Habitica অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের অভ্যাস তৈরি করতে পুরষ্কার এবং শাস্তির ব্যবস্থা করে। ভালো কাজ করলে ব্যবহারকারী পয়েন্ট অর্জন করে, যা দিয়ে তারা তাদের ভার্চুয়াল চরিত্রের জন্য বিভিন্ন জিনিস কিনতে পারে।
Ahead অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের মানসিক বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ছোট ছোট কোর্সের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়।
আর Pokémon Sleep অ্যাপটি ঘুমের অভ্যাস উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি ঘুমের সময় ব্যবহারকারীর স্মার্টফোন ব্যবহার করে ঘুমের ধরন বিশ্লেষণ করে এবং ঘুমের মান উন্নত করার পরামর্শ দেয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই অ্যাপগুলোর কিছু সুবিধা থাকলেও সবার জন্য এগুলো উপযুক্ত নাও হতে পারে। বিশেষ করে যারা অতিরিক্ত উদ্বেগে ভোগেন, তাদের জন্য এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করা চাপ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
একজন বিশেষজ্ঞের মতে, অতিরিক্ত মনোযোগ সহকারে অভ্যাস এবং আবেগ ট্র্যাক করা আসলে উপকারী হওয়ার পরিবর্তে মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশেও এই ধরনের অ্যাপগুলোর চাহিদা বাড়ছে, তবে এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা করা দরকার।
প্রথমত, আমাদের সংস্কৃতিতে পরিবার এবং সামাজিক সম্পর্কের গুরুত্ব অনেক বেশি। অনেক ক্ষেত্রে, পরিবারের সদস্যরা বা বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে মানসিক চাপ কমানো সম্ভব।
দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং ডেটা সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও, অ্যাপগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে স্মার্টফোন আসক্তি বাড়তে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
পরিশেষে বলা যায়, গ্যামিফাইড সেলফ-কেয়ার অ্যাপগুলো কিছু মানুষের জন্য সহায়ক হতে পারে, তবে এটি সবার জন্য সব সমস্যার সমাধান নয়। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং ভালো থাকার জন্য জীবনযাত্রায় ভারসাম্য আনা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: The Guardian