ডায়েরি: ব্যক্তিগত গোপনতার এক সংবেদনশীল জগৎ। আমরা সবাই আমাদের জীবনে কিছু ব্যক্তিগত মুহূর্ত, অনুভূতি এবং চিন্তাভাবনা গোপন রাখতে চাই।
এই গোপনীয়তা রক্ষার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হল ডায়েরি। একজন ব্যক্তি তাঁর ডায়েরিতে নিজের জীবনের কথা, ভালো-মন্দ অভিজ্ঞতা, এমনকি গোপন ইচ্ছাগুলোও লিখে রাখেন। কিন্তু এই ডায়েরিগুলো যদি তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশ করা হয়, তবে তা কি ঠিক?
সম্প্রতি, বিখ্যাত লেখিকা জোয়ান দিদিওনের থেরাপি জার্নাল প্রকাশের পর এই প্রশ্নটি নতুন করে উঠেছে।
দিদিওনের থেরাপি জার্নালগুলো ‘নোটস টু জন’ শিরোনামে প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকেই এর বিষয়বস্তু নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এই জার্নালগুলোতে দিদিওনের ব্যক্তিগত জীবনের এমন কিছু দিক উন্মোচিত হয়েছে, যা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত এবং জনসাধারণের সামনে প্রকাশ করা উচিত হয়নি।
সমালোচকদের মতে, জার্নালগুলোতে দিদিওনের দুর্বলতা, মানসিক যন্ত্রণা এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতাগুলো নগ্নভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
তবে, ডায়েরি লেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল আত্ম-অনুসন্ধান। ডায়েরি লেখার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের চিন্তাগুলোকে গুছিয়ে নিতে পারেন, অতীতের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করতে পারেন এবং ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করতে পারেন।
বিখ্যাত অভিনেতা মাইকেল প্যালিন তাঁর ডায়েরি লেখার অভ্যাসের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, এর মাধ্যমে জীবনকে আরও স্পষ্টভাবে দেখা যায়। ডায়েরি লেখার ফলে জীবনের অস্পষ্টতাগুলো দূর হয় এবং প্রতিটি অভিজ্ঞতা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ডায়েরি প্রকাশ করা উচিত কিনা, সেই বিতর্কের আরেকটি দিক হল এর সাহিত্যিক মূল্য। স্যামুয়েল পেপিস, সিলভিয়া প্লাথ এবং হেলেন গಾರ್নারের মতো লেখকদের ডায়েরিগুলো তাঁদের মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে এবং সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
এই ডায়েরিগুলো থেকে আমরা তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন, সমকালীন সমাজের চিত্র এবং তাঁদের লেখার শৈলী সম্পর্কে জানতে পারি। তবে, ব্যক্তিগত ডায়েরি প্রকাশের ক্ষেত্রে গোপনীয়তার অধিকারকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হবে, সেই প্রশ্নটি থেকেই যায়।
অনেকের মতে, ডায়েরি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত একটি বিষয়। এটি লেখকের একান্ত নিজস্ব জগৎ, যেখানে তিনি তাঁর দুর্বলতা, ভয় এবং উদ্বেগকে প্রকাশ করেন। তাই, লেখকের মৃত্যুর পরে তাঁর ডায়েরি প্রকাশ করা হলে, তা তাঁর ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন হতে পারে।
অনেক ডায়েরি লেখক মনে করেন, তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের ডায়েরিগুলো ধ্বংস করে দেওয়া উচিত।
আসলে, ডায়েরি প্রকাশের বিষয়টি একটি জটিল বিষয়। একদিকে, এর সাহিত্যিক মূল্য এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকতে পারে। অন্যদিকে, লেখকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে।
এই দুইয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার। প্রত্যেক লেখকেরই অধিকার আছে, তাঁর ব্যক্তিগত লেখাগুলো প্রকাশ করা হবে কিনা, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
তথ্য সূত্র: The Guardian