যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রবেশ করে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক। সম্প্রতি এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এসোসিয়েটেড প্রেস-নর্ক সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চের (AP-NORC) করা জরিপে দেখা গেছে, মার্কিনীদের মধ্যে মাস্কের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
একসময় প্রযুক্তি বিশ্বে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন ইলন মাস্ক। তার উদ্ভাবনী চিন্তা ও ব্যবসায়িক সাফল্যের কারণে তিনি দ্রুত পরিচিতি লাভ করেন। কিন্তু সরকারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর যেন তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া মাত্র ৩৩ শতাংশ আমেরিকান মাস্কের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন, যা ডিসেম্বরের ৪১ শতাংশের তুলনায় অনেক কম।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের ধারণা, গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারে মাস্কের প্রভাব ছিল অনেক বেশি। তবে খুব শীঘ্রই হয়তো সেই প্রভাব কমে আসবে। কারণ, ধারণা করা হচ্ছে তিনি খুব শীঘ্রই তার সরকারি পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন।
মাস্কের সরকারে কাজ করা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন অনেকে। পেনসিলভানিয়ার ৭৫ বছর বয়সী সুসান উলফ নামের এক বৃদ্ধা জানান, তিনি মনে করেন সরকার অনেক বড় হয়ে গেছে, কিন্তু মাস্ক সবকিছু এলোমেলো করে ফেলেছেন। তিনি বলেন, “আমি তাকে বিশ্বাস করি না। আমার মনে হয় না তিনি জানেন তিনি কি করছেন।” উলফ আরও বলেন, ব্যক্তিগত খাতে মাস্কের সাফল্য সরকারি কাজে প্রতিফলিত হয় না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের সময় ফেডারেল সরকারের আকার ছোট করার চেষ্টা করা হয়। মাস্ক সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে সরকারের আকার ছোট করার বিষয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মনে করেন, ট্রাম্প এই বিষয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন, আবার অনেকে মনে করেন, তিনি সঠিক পথে আছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মাস্কের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও তার জনপ্রিয়তা হ্রাসের একটি কারণ। তিনি আগে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পক্ষে ছিলেন এবং ডেমোক্রেটদের সমর্থন করতেন। কিন্তু এখন তিনি রক্ষণশীলদের দিকে ঝুঁকছেন এবং “ওয়েক মাইন্ড ভাইরাস”-এর সমালোচনা করছেন।
মাস্কের এই পরিবর্তনে তার প্রতি মানুষের ধারণাও বদলেছে। জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকানদের মধ্যে যেখানে ৭০ শতাংশের বেশি মাস্ককে সমর্থন করেন, সেখানে ডেমোক্রেট ও স্বতন্ত্রদের মধ্যে এই সংখ্যা অনেক কম।
মিশিগানের ৬৭ বছর বয়সী মার্ক কলিন্স নামের একজন মনে করেন, মাস্ক তার কোম্পানিগুলোতে “একটি সুন্দর, সুসংগঠিত ব্যবস্থা” তৈরি করেছেন এবং সরকারেরও সেই ধরনের সংস্কার প্রয়োজন।
জরিপটি গত ১৭ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ১,২৬০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর চালানো হয়। এতে দেখা যায়, মাস্কের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার পেছনে সরকারের সঙ্গে তার কাজ করা এবং রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস-নর্ক সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ