বাংলাদেশে কুকুর: কিছু সাধারণ সমস্যা এবং সমাধান

আজকাল অনেক মানুষই তাদের বাড়িতে কুকুর পোষেন। শহরের ফ্ল্যাটবাড়িতে হোক বা গ্রামের বাড়িতে, কুকুর এখন অনেকেরই পরিবারের সদস্য।

তবে, কুকুরদের লালন-পালন করা সহজ কাজ নয়। তাদের স্বাস্থ্য, খাদ্য এবং আচরণের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, কুকুরের কিছু আচরণগত সমস্যা হয়, যা মালিকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়।

এই আর্টিকেলে আমরা তিনজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করব, যা আপনাকে আপনার কুকুরের কিছু সাধারণ সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে।

কুকুরের সমস্যার সমাধানে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

১. দড়ি ধরে টানাটানি (Pulling on the Lead):

কুকুরকে হাঁটাতে বের করলে প্রায়ই দেখা যায় তারা দড়ি ধরে খুব টানে। এর কারণ হতে পারে অনুপযুক্ত সরঞ্জাম বা প্রশিক্ষণের অভাব।

এই সমস্যা সমাধানে, প্রশিক্ষকরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন:

• সঠিক সরঞ্জাম নির্বাচন: “ডগফাদার” নামে পরিচিত গ্রেম হল বলেছেন, “যদি আপনার কাছে একটা “হার্নেস” থাকে, তবে দড়িটা কুকুরের বুকের সাথে যুক্ত করুন, যা আপনাকে দিক পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে।”
• দড়ির দৈর্ঘ্য: দড়ির দৈর্ঘ্যও গুরুত্বপূর্ণ। খুব ছোট দড়ি ব্যবহার করলে কুকুর টানতে শুরু করবে। আবার, খুব লম্বা দড়ি হলে কুকুর আপনার থেকে দূরে চলে যেতে পারে।
• জে (J) আকৃতির দড়ি: হল একটি “জে” আকৃতির দড়ি ব্যবহারের পরামর্শ দেন। কুকুরের কাঁধ আপনার পায়ের পাশে থাকলে, দড়িটির আকৃতি “জে” এর মতো হওয়া উচিত।

২. অন্যান্য কুকুরের প্রতি আগ্রাসন (Aggression Towards Other Dogs):

কুকুরের আরেকটি সাধারণ সমস্যা হল অন্য কুকুরের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ করা। এই ক্ষেত্রে, নিরাপত্তা সবার আগে।

• দূরত্ব বজায় রাখা: যদি আপনার কুকুর অন্য কুকুরের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায়, তবে তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।
• ধৈর্য সহকারে প্রশিক্ষণ: ধীরে ধীরে, তাদের শান্ত থাকার প্রশিক্ষণ দিন.
• বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: এই ধরনের সমস্যা গুরুতর হলে, একজন প্রশিক্ষকের সাহায্য নিন।

৩. ভেড়া তাড়া করা (Chasing Livestock):

আমাদের দেশে ভেড়ার বদলে গরু, ছাগল বা হাঁস-মুরগির দেখা বেশি পাওয়া যায়। কুকুর যদি তাদের তাড়া করে, তবে তা খুবই উদ্বেগের বিষয়।

• নিয়ন্ত্রণ: এই ধরনের পরিস্থিতিতে কুকুরটিকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
• বৈদ্যুতিক শক কলার ব্যবহার নয়: এই ধরনের কলার ব্যবহার করা উচিত নয়।

৪. লাফানো (Jumping Up):

কুকুর সাধারণত উত্তেজিত হলে লাফায়।

• ইতিবাচক আচরণ শেখানো: কুকুরকে “বসতে” বা “শুয়ে থাকতে” শেখান।
• নিয়ন্ত্রণ: বাইরে অপরিচিত কারো সাথে দেখা হলে, কুকুরটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

৫. অতিরিক্ত ঘেউ ঘেউ করা (Excessive Barking):

কুকুরের অতিরিক্ত ঘেউ ঘেউ করাও একটি সমস্যা।

• কারণ চিহ্নিত করা: কেন কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করছে, তা খুঁজে বের করুন। সে কি ভয় পেয়েছে, নাকি উত্তেজিত?
• আচরণ পরিবর্তন: কুকুরের মানসিক অবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ, অন্য কুকুরকে দেখলে তাকে পুরস্কৃত করুন।

৬. অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা (Neediness):

কুকুর তার মালিকের সাথে সময় কাটাতে চায়, এটা স্বাভাবিক।

• পর্যাপ্ত সময় দিন: তাদের সাথে পর্যাপ্ত সময় কাটান এবং তাদের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করুন।
• স্বাধীন হতে শেখান: ধীরে ধীরে তাদের একা থাকার অভ্যাস করান।

৭. পর্যাপ্ত ব্যায়ামের অভাব (Inadequate Exercise in Urban Environments):

শহরে কুকুরের জন্য পর্যাপ্ত ব্যায়ামের ব্যবস্থা করা কঠিন।

• “আউটিং”-এর ধারণা: “ওয়াক”-এর পরিবর্তে, তাদের “আউটিং”-এ নিয়ে যান, যেখানে তারা দৌড়াতে, খেলতে এবং সবকিছু শুঁকতে পারে।

৮. উপযুক্ত খেলনা নির্বাচন (Appropriate Toy Selection):

কুকুরের খেলনা নির্বাচন করাও গুরুত্বপূর্ণ।

• নিরাপদ খেলনা: সস্তা প্লাস্টিকের খেলনা ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রাকৃতিক উপাদান বা ভক্ষণযোগ্য খেলনা ব্যবহার করুন।

উপসংহার

কুকুরের আচরণগত সমস্যাগুলো সমাধানে ধৈর্য এবং সঠিক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। কোনো সমস্যা হলে, অভিজ্ঞ পশুচিকিৎসক বা প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিন।

তথ্য সূত্র: The Guardian