কর্মক্ষেত্রে ছুটি কাটানোর গুরুত্ব: কেন বার্ষিক ছুটি নেওয়া জরুরি। আজকের কর্মব্যস্ত যুগে, কর্মীদের মধ্যে প্রায়ই একটি প্রবণতা দেখা যায়, আর তা হলো তাদের প্রাপ্য ছুটিগুলো কাজে লাগানো থেকে বিরত থাকা।
এই প্রবণতাকে ‘ভ্যাকেশন হোডিং’ বলা হয়, যেখানে কর্মীরা তাদের বার্ষিক ছুটি জমা করে রাখেন, কাজে যান না। কর্মীর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর এর গুরুতর প্রভাব পড়ে।
যুক্তরাজ্যের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সেখানকার কর্মীদের মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ তাদের প্রাপ্য ছুটি সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করেন। অনেক কর্মী আছেন যারা ছুটি কাটানোকে কর্মজীবনের পথে বাধা হিসেবে দেখেন।
তারা মনে করেন, ছুটি নিলে হয়তো তাদের কর্মজীবনে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া, কর্মীদের মধ্যে এমন একটা ধারণা কাজ করে যে বেশি কাজ করলে তারা কর্তৃপক্ষের সুনজরে থাকবেন। তবে, বাস্তবে এর ফল হয় ভিন্ন।
ছুটি না কাটানোর কারণে কর্মীদের মধ্যে অবসাদ, মানসিক চাপ এবং কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এমনকি, দীর্ঘ সময় ধরে ছুটি না নিলে অনেক সময় ‘বার্নআউট’ বা কাজের চাপে সম্পূর্ণ ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এর ফলস্বরূপ, কর্মীদের কাজে মনোযোগ কমে যায়, উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় এবং অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
অন্যদিকে, ছুটি কাটানোর অনেক সুফল রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ছুটি নিলে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে এবং অসুস্থতাজনিত কারণে কর্মীর ছুটি নেওয়ার প্রবণতা ২৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
এর কারণ হলো, ছুটি শরীর ও মনকে বিশ্রাম দেয়, যা কর্মীদের কাজে আরও বেশি মনোযোগী হতে সাহায্য করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছুটি কাটানোর গুরুত্ব আরও বেশি। আমাদের দেশে কর্মীদের কর্মঘণ্টা পশ্চিমা বিশ্বের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। অনেক সময় কর্মীদের ব্যক্তিগত জীবন এবং কাজের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এমন পরিস্থিতিতে, বার্ষিক ছুটি কর্মীদের জন্য মানসিক শান্তির পাশাপাশি কাজের চাপ থেকে মুক্তি পেতে সহায়ক হতে পারে।
বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী, কর্মীদের বছরে নির্দিষ্ট সংখ্যক ছুটি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কর্মীদের এই ছুটিগুলো নেওয়ার বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত।
এছাড়াও, বিভিন্ন কোম্পানির উচিত কর্মীদের ছুটি কাটাতে উৎসাহিত করা এবং সুস্থ কর্মপরিবেশ তৈরি করা।
সুতরাং, কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে বার্ষিক ছুটি অপরিহার্য। প্রতিটি কর্মীর উচিত তাদের প্রাপ্য ছুটিগুলো সময়মতো উপভোগ করা এবং জীবন ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।
তথ্য সূত্র: The Guardian