শিরোনাম: বালিতে এক রাতে: বিষাক্ত ককটেল পানের পর দৃষ্টি হারানো এক তরুণীর গল্প
কানাডার ক্যালগারির বাসিন্দা উনিশ বছর বয়সী অ্যাশলি কিং-এর জীবনটা হঠাৎ করেই ওলট-পালট হয়ে গিয়েছিল। ২০১১ সালের আগস্ট মাসের এক রাতে, ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ছুটি কাটানোর সময় তিনি এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার শিকার হন।
বন্ধুদের সঙ্গে একটি বারে যাওয়া তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সেখানে পান করা একটি ককটেল-ই তাঁর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।
বালির কুটা অঞ্চলে বন্ধুদের সঙ্গে বার হপিং করছিলেন অ্যাশলি। সেখানকার একটি জনপ্রিয় বারে তাঁকে একটি ফল-ফ্লেভারের ভদকা ককটেল পরিবেশন করা হয়। পান করার কিছুক্ষণ পরেই তিনি অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন।
প্রথমে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেননি, কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পরেই আসল বিপদটা টের পাওয়া যায়।
পরের দিন, যখন তিনি নিউজিল্যান্ডে একটি রাগবি বিশ্বকাপের খেলা দেখতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন, তখন তাঁর চোখে ঝাপসা দেখা শুরু হয়। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন অফিসারদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর কথা বলতেও সমস্যা হচ্ছিল।
তিনি বুঝতে পারছিলেন না তাঁর কি হচ্ছে। দ্রুতই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এরপর হাসপাতালে তাঁর রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, তাঁর শরীরে বিষাক্ত মিথানল প্রবেশ করেছে।
মিথানল এক ধরনের অ্যালকোহল, যা অনেক সময় চোলাই মদে মেশানো হয়, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি খেলে অন্ধত্ব, মস্তিষ্কের ক্ষতি এবং এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
অ্যাশলির শরীরে মিথানলের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে চিকিৎসকেরা প্রথমে ভেবেছিলেন, তিনি হয়তো বাঁচবেন না।
চিকিৎসকরা দ্রুত তাঁর চিকিৎসা শুরু করেন। তাঁকে প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল পান করানো হয়, যা মিথানলের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। এরপর তাঁর হেমোডায়ালাইসিস করা হয়, যা তাঁর শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সহায়ক ছিল।
চিকিৎসার পর যখন অ্যাশলির জ্ঞান ফেরে, তখন চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। তিনি চিরদিনের জন্য দৃষ্টিহীন হয়ে গিয়েছেন।
এই খবর অ্যাশলির জন্য ছিল এক বিরাট ধাক্কা। তিনি সম্পূর্ণ একা হয়ে গিয়েছিলেন, কারণ তাঁর মা তখনও সেখানে এসে পৌঁছাননি।
দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর অ্যাশলি স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হন। তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন।
বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে, খেলাধুলা করতে তাঁর অসুবিধা হতো। এমনকি সাধারণ কাজকর্ম করতেও তিনি অন্যের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
কিন্তু অ্যাশলি হাল ছাড়েননি। ধীরে ধীরে তিনি এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, জীবন থেমে থাকে না।
প্রথমে হয়তো এটা কঠিন ছিল, কিন্তু তিনি তাঁর ভেতরের শক্তি খুঁজে পান।
দৃষ্টিহীন হওয়ার কয়েক বছর পর, অ্যাশলি দক্ষিণ আমেরিকার সাতটি দেশে ভ্রমণ করেন। তিনি আগ্নেয়গিরি আরোহণ করেন, হাঙরের সঙ্গে সাঁতার কাটেন।
তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া শুরু করেন।
অ্যাশলি সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং থিয়েটারে কাজ করা শুরু করেন। তাঁর জীবনের এই কঠিন অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি একটি নাটকও লিখেছেন।
তিনি প্রমাণ করেছেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারে এবং সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।
অ্যাশলির জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় যে, প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়। তাঁর গল্প সাহস, ইচ্ছাশক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান