কমিউনিস্ট যুগের স্মৃতি: যুগো গাড়িতে চড়ে সার্বিয়ার পথে
পুরোনো দিনের স্মৃতি আজও অনেকের কাছে অমূল্য। যুগ যুগ ধরে মানুষের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে বিভিন্ন স্থান। তেমনই এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে সার্বিয়ার পথে যাত্রা করা। আর এই যাত্রাপথের সঙ্গী ছিল এক সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নের স্মৃতিবিজড়িত ‘যুগো’ গাড়ি।
যারা পুরনো দিনের নস্টালজিয়া ভালোবাসেন, তাদের জন্য যুগো যেন এক বিশেষ আকর্ষণ।
বেলিগ্রেডে, ‘ইউগোভার্স ট্যুরস’-এর ভোজিন জুগিচের সঙ্গে দেখা হয়, যিনি এই ধরনের পুরনো দিনের স্মৃতি বিজড়িত ভ্রমণের আয়োজন করেন। যুগো গাড়ির ছোট্ট হেডলাইট, ক্যাসেট প্লেয়ার আর পুরনো চামড়ার সিটের গন্ধ যেন এক অন্য জগৎ-এ নিয়ে যায়।
শহরের পুরনো ব্রিজ আর স্থাপত্যের মধ্যে দিয়ে যখন গাড়িটি ছুটে চলে, তখন যেন এক অন্য অনুভূতির সৃষ্টি হয়। অনেকেই হাসিমুখে হাত নাড়ে, কারণ যুগো তাদের কাছে এক প্রিয় স্মৃতি।
এই ভ্রমণের মূল আকর্ষণ ছিল যুগো গাড়ির সংস্কৃতি। একসময় যুগো ছিল বলকান অঞ্চলের মানুষের কাছে খুব পরিচিত একটি নাম।
ইতালির সহায়তায় যুগোস্লাভিয়ার প্রস্তুতকারক জাস্তভা (Zastava) এই গাড়ি তৈরি করত। বর্তমানে, এই ক্লাসিক গাড়িগুলো মূলত বয়স্ক মানুষের কাছে দেখা যায়। তবে বেলিগ্রেডে, প্রায় ৫০ জন তরুণ-তরুণীর একটি দল ‘ইউগোভার্স’-এর মাধ্যমে এই পুরোনো গাড়িগুলোকে নতুন করে সাজিয়ে তোলে।
তারা এইসব গাড়িকে সংগ্রহ করে, সারাই করে এবং পর্যটকদের ঘোরাঘুরির জন্য ব্যবহার করে।
ভোজিন জুগিচ জানান, তাঁদের এই কাজের মূল উদ্দেশ্য হল দেশের বিংশ শতাব্দীর ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা। কারণ, এই অঞ্চলের অনেক ঐতিহাসিক স্থান সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া অটোমোবাইল জাদুঘর, একটি বিলাসবহুল হোটেল তৈরির জন্য ভেঙে ফেলা ‘হোটেল যুগোস্লাভিয়া’ এবং শিল্পী ও গোপন পার্টির স্থান হিসেবে পরিচিত ‘জুগোস্পেড’ গুদামটিও এখন ভেঙে ফেলা হচ্ছে।
আর্কিটেকচার ভালোবাসেন এমন অনেক মানুষের কাছে এখানকার ‘ব্রুটালিস্ট’ স্থাপত্যশৈলী এক বিশেষ আকর্ষণ। এই ধরনের স্থাপত্যে কংক্রিট এবং জ্যামিতিক আকারের ব্যবহার দেখা যায়।
গেক্সে টাওয়ারের মতো ভবনগুলো একসময় সমাজতান্ত্রিক ভাবনার প্রতীক ছিল।
এরপর যাত্রা শুরু হয় মধ্য সার্বিয়ার দিকে। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ হল ম্যাগলিচ ক্যাসল।
ত্রয়োদশ শতকে মঙ্গোল আক্রমণের সময় এটি নির্মিত হয়েছিল। এখানকার স্থানীয় যুবকরা মিলে এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছেন।
তাঁরা পুরোনো দিনের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চান, যা এই অঞ্চলের সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করে।
এখানকার একটি গেস্ট হাউসে পর্যটকদের থাকারও ব্যবস্থা রয়েছে।
এই ভ্রমণের মাধ্যমে যুগো গাড়ির সংস্কৃতি, স্থাপত্য এবং স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। যুগো গাড়িতে চড়ে সার্বিয়ার আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ানো যেন এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
তথ্য সূত্র: The Guardian