সোশ্যাল মিডিয়ায় পশুদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, আর এর সাথে বাড়ছে তাদের মালিকদের আয়ও। ‘ডগইনফ্লুয়েন্সার’ ধারণাটি এখন বেশ পরিচিতি লাভ করেছে, যেখানে বিভিন্ন কুকুর তাদের আকর্ষণীয় ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ অনুসারী তৈরি করছে। এই অনুসারীর সংখ্যা তাঁদের মালিকদের জন্য খুলে দিচ্ছে বিশাল আয়ের সম্ভাবনা।
টিভি, সিনেমা অথবা ফ্যাশন জগতের তারকাদের মতো, এইসব কুকুরদেরও এখন বিশাল ফ্যানবেস রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি নাম হল টুনা, একটি চিহুয়াহুয়া এবং ড্যাক্সহাউন্ডের মিশ্রণ। তার বিশেষ শারীরিক গঠন, যেমন – বাঁকা চোয়াল এবং সবসময় জিভ বের করে ঘুমানোর ভঙ্গিমা, তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।
টুনা’র প্রায় ২ মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে এবং সে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়। কিন্তু কেন এই কুকুরগুলি এত জনপ্রিয়? মনোবিজ্ঞানী জশুয়া পল ডেলের মতে, ‘গ্যাপ কাওয়াই’ নামক একটি ধারণা এক্ষেত্রে কাজ করে।
‘কাওয়াই’ জাপানি শব্দ, যার অর্থ হলো ‘সুন্দর’। এই ‘গ্যাপ কাওয়াই’-এর ধারণাটি হলো, যখন কোনো সুন্দর জিনিসের মধ্যে কিছু অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়, যা দর্শকদের আরও আকৃষ্ট করে। টুনা’র ক্ষেত্রে তার মুখের গড়ন এই আকর্ষণ তৈরি করে।
টুনা’র মতো, আরও অনেক ডগইনফ্লুয়েন্সার রয়েছে, যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – লো্কি নামের একটি নেকড়ে-কুকুর, জিফ নামের একটি পোমেরিয়ান, ডগ নামের একটি pug এবং মায়া নামের একটি স্যাময়েড। এই কুকুরগুলোর নিজস্ব স্টাইল এবং আকর্ষণীয়তা রয়েছে, যা তাদের ফলোয়ারদের মন জয় করে।
সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ জেন গোলবেকের মতে, এই কুকুরগুলোর জনপ্রিয়তার মূল কারণ হলো, তাদের ভিন্নতা। তাদের চেহারা অন্যান্য সাধারণ কুকুরদের থেকে আলাদা, যা সহজেই দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। একইসঙ্গে, তারা “অস্বাভাবিক উপায়ে খুব সুন্দর”।
এই কুকুরদের ছবি দেখলে মানুষের মনে ভালো লাগা কাজ করে, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। মায়া নামের স্যাময়েড কুকুরের মালিক প্রায়ই তাকে বিভিন্ন মজাদার পোশাকে সাজিয়ে ছবি পোস্ট করেন, যা দর্শকদের মধ্যে হাসির জন্ম দেয়।
তবে, এই ধরনের জনপ্রিয়তার কিছু নৈতিক দিকও রয়েছে। কুকুরদের পোশাক পরানো এবং তাদের জীবনযাত্রাকে মানুষের মতো করে তোলার বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। এছাড়াও, অনেক ‘সুন্দর’ প্রজাতির কুকুর ইনব্রিডিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা হয়, যা তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।
তবে, এই সমস্ত বিতর্ক সত্ত্বেও, ডগইনফ্লুয়েন্সাররা প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, পোষা প্রাণী প্রভাব বিস্তারকারীদের মাধ্যমে প্রচারিত সামগ্রীর সাথে মানুষের অংশগ্রহণের হার বেশি থাকে এবং তারা বিজ্ঞাপন করা পণ্য কিনতে আগ্রহী হয়। এর কারণ হলো, তাদের মানুষের চেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে করা হয়।
ধারণা করা হয়, এই ধরনের অ্যাকাউন্টগুলো প্রতি ১০,০০০ ফলোয়ারের জন্য প্রতি মাসে প্রায় ২০,০০০ টাকার বেশি আয় করে। বর্তমানে, সামাজিক অস্থিরতা ও একাকিত্বের এই সময়ে, ডগইনফ্লুয়েন্সাররা মানুষকে বিনোদন যোগাচ্ছে। তাদের ছবি ও ভিডিওগুলি দর্শকদের মধ্যে আনন্দ ও মুক্তির অনুভূতি তৈরি করে।
তথ্য সূত্র: The Guardian