৬৫ বছর পেরিয়েও উদ্যোক্তা: নতুন দিগন্তের সূচনা।
বিশ্বজুড়ে কর্মজীবনের সংজ্ঞা দিন দিন বদলাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে ষাটের কোঠায় পৌঁছেও অনেকে নতুন করে ব্যবসা শুরু করছেন, যা একসময় কল্পনাতীত ছিল। শুধু পশ্চিমা বিশ্বেই নয়, এই প্রবণতা এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয়।
কর্মজীবনের এই নতুন ধারণার কারণ কী? বয়স্ক মানুষেরা কেন উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে ঝুঁকছেন? এই বিষয়গুলো নিয়ে আজকের আলোচনা।
যুক্তরাজ্যের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালে ৬০ বছরের বেশি বয়সী স্ব-কর্মসংস্থাপিত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ ছুঁয়েছে। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে— কর্মজীবনের গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের পছন্দের কাজ করা, আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন, এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি।
অনেকের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন থাকে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার। কয়েক দশক ধরে একঘেয়ে কাজ করার পর, অনেকে জীবনের এই পর্যায়ে এসে নিজেদের ভেতরের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে চান।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের কারি জনস্টন-এর কথা বলা যায়। তিনি দীর্ঘদিন নার্সিং পেশায় ছিলেন। ৬৩ বছর বয়সে পেশা পরিবর্তন করে ডিক্লাটারিং ও অর্গানাইজিং সার্ভিস শুরু করেন। বর্তমানে তিনি এই কাজটি উপভোগ করছেন এবং ভালো আয় করছেন।
আবার, অনেকে আছেন যারা আর্থিক কারণে এই বয়সেও কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারি সুযোগ-সুবিধা কমে যাওয়া এবং বয়স-সংক্রান্ত বৈষম্যের কারণে অনেক বয়স্ক মানুষ নিয়মিত চাকরি খুঁজে পান না। ফলে জীবিকা নির্বাহের জন্য তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে ঝুঁকতে হয়।
যুক্তরাজ্যের ৬৪ বছর বয়সী ক্যাথ-এর কথা ভাবুন। তিনি রুটি তৈরির ব্যবসা শুরু করেছেন, কারণ সরকারি পেনশনের উপর নির্ভর করে জীবন চালানো তার জন্য কঠিন ছিল।
তবে শুধু আর্থিক স্বাধীনতা বা বাধ্যবাধকতা নয়, এই বয়সে নতুন কিছু করার আগ্রহও অনেককে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করে। তাদের মতে, কর্মব্যস্ত থাকাটা জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
৭০ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু হল-এর কথাই ধরুন। তিনি ক্যান্সারের বিরল রোগীদের জন্য চিকিৎসা সহায়তার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন।
এই উদ্যোক্তাদের সাফল্যের পেছনে যেমন কিছু কারণ রয়েছে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বয়স্ক উদ্যোক্তাদের মূলধন এবং উপযুক্ত সহায়তার অভাব একটি বড় সমস্যা। অনেক সময় তারা ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা পান না।
এছাড়াও, বয়স্ক হওয়ার কারণে শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিষয়টা বিবেচনা করি, তাহলে দেখব এখানেও বয়স্ক মানুষের কর্মসংস্থান এবং উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি নীতি এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের মাধ্যমে বয়স্ক উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যেতে পারে।
তাদের ব্যবসার জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রশিক্ষণ এবং উপযুক্ত স্থান সরবরাহ করা যেতে পারে। এটি একদিকে যেমন বয়স্ক মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে, তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
কাজ এবং জীবনের এই নতুন পথে, বয়স্ক উদ্যোক্তারা তাদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে সমাজকে নতুন কিছু দিতে পারেন।
তথ্যসূত্র: The Guardian