আর্ট ডেকো স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত : নিউ ইয়র্কের আকর্ষণীয় ক্রাইসলার বিল্ডিং।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে স্থাপত্য জগতে এক নতুন ধারার জন্ম হয়েছিল, যা পরিচিত আর্ট ডেকো (Art Deco) নামে। এই স্থাপত্যশৈলী কেবল নকশার অভিনবত্বেই নয়, বরং আধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবনী প্রয়োগের মাধ্যমেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হলো নিউ ইয়র্কের ক্রাইসলার বিল্ডিং। এই আকাশচুম্বী অট্টালিকা শুধু একটি স্থাপত্যকর্ম নয়, বরং আধুনিকতার এক উজ্জ্বল প্রতীক।
১৯৩০ সালে তৈরি হওয়া এই ভবনটি একসময় বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং ছিল। যদিও এই খেতাবটি বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি, কিন্তু এর আকর্ষণ আজও অম্লান।
ম্যানহাটনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই বিল্ডিংটি শুধু উচ্চতার জন্যেই নয়, এর অনন্য ডিজাইন-এর কারণেও বিখ্যাত।
আর্ট ডেকো স্থাপত্যের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল জ্যামিতিক আকার, উজ্জ্বল রঙ এবং বিলাসিতার ছোঁয়া। ক্রাইসলার বিল্ডিং-এও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
এর চূড়ায় সজ্জিত স্পাইয়ারটি (spire) বিশেষভাবে নজর কাড়ে। জার্মানির তৈরি ‘নিরোস্টা’ (Nirosta) স্টিল-এর ব্যবহার এর উজ্জ্বলতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সূর্যের আলো পড়লে এই ধাতব অংশটি যেন ঝলমল করে ওঠে, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
এই বিল্ডিং-এর নকশায় তৎকালীন সময়ের প্রকৌশল ও ডিজাইনের এক চমৎকার সমন্বয় দেখা যায়। প্রতিটি তলার নকশায় আলোর ব্যবহার, কারুকার্যখচিত জানালা এবং অলঙ্করণ, সবকিছুই আর্ট ডেকো শৈলীর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এছাড়া, বিল্ডিংটির ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে মার্বেল ও ট্র্যাভারটাইন পাথরের সমন্বয়ে গড়া আকর্ষণীয় লবি। এখানকার দেয়ালে এডওয়ার্ড ট্রাম্বলের আঁকা বিশাল “ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড হিউম্যান এন্ডেভার” (Transport and Human Endeavor) নামের ম্যুরালটি মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও প্রযুক্তির প্রতি উৎসর্গীকৃত।
তবে, নির্মাণের সময় এই বিল্ডিং নিয়ে কিছু বিতর্কও ছিল। অনেকে এর স্পাইয়ারটিকে অতিরিক্ত অলঙ্করণ হিসেবে সমালোচনা করেছিলেন।
সমালোচকদের মতে, এটি যেন শুধু উচ্চতা বাড়ানোর একটি কৌশল ছিল।
ক্রাইসলার বিল্ডিং-এর ডিজাইন করেছেন উইলিয়াম ভ্যান অ্যালেন। এর নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন ডেভেলপার উইলিয়াম এইচ. রেইনল্ডস, পরে তা কিনে নেন অটোমোবাইল ব্যবসায়ী ওয়াল্টার ক্রাইসলার।
বিল্ডিংটি নির্মাণের সময় উচ্চতা নিয়ে অন্য একটি ভবনের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা চলেছিল, যা সেই সময়ের সংবাদ মাধ্যমেও আলোচিত হয়।
ক্রাইসলার বিল্ডিং শুধু একটি স্থাপত্যকর্ম নয়, এটি নিউ ইয়র্কের আধুনিক ইতিহাসেরও একটি অংশ। এই বিল্ডিং-এর নির্মাণশৈলী, উপকরণ এবং ডিজাইন-এর উদ্ভাবনী ব্যবহার স্থাপত্যপ্রেমীদের আজও আকৃষ্ট করে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন