মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: কিভাবে ভালো রাখবেন আপনার স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধি?
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো মস্তিষ্কেরও যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বা বুদ্ধি লোপ পাওয়ার মতো সমস্যাগুলো বর্তমানে একটি উদ্বেগের কারণ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব। আসুন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সেই উপায়গুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
শারীরিক স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের সম্পর্ক:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত ঘুম—এগুলো শরীরের জন্য যেমন জরুরি, তেমনি মস্তিষ্কের জন্যও প্রয়োজনীয়।
যারা মধ্যবয়সে পৌঁছেছেন, তাদের জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনাটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকুন:
ধূমপান মস্তিষ্কের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অতিরিক্ত মদ্যপানও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
অল্প পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন হয়তো কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে না, তবে দৈনিক মদ্যপান মস্তিষ্কের জন্য ভালো নয়।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
শারীরিক সক্রিয়তা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা সপ্তাহে অন্তত তিন দিন, ২০-৩০ মিনিটের জন্য এমন ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন, যাতে সামান্য শ্বাসকষ্ট হয়।
দৌড়ানো, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানো এক্ষেত্রে উপকারী। ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে, যা মস্তিষ্কের জন্য ভালো।
এক পায়ে দাঁড়ানোর অভ্যাস করুন:
নিয়মিত এক পায়ে দাঁড়িয়ে ব্যালেন্স রক্ষার চেষ্টা করা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন:
খাবারের তালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অসম্পৃক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার যোগ করুন। ভাজাভুজি ও অতিরিক্ত রেড মিট পরিহার করুন।
খাদ্যতালিকায় জলপাই তেল ব্যবহার করা এবং ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ খাওয়া মস্তিষ্কের জন্য ভালো। নিরামিষভোজীদের ভিটামিন বি১২ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত।
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন:
পর্যাপ্ত জল পান করা এবং ক্যাফিন গ্রহণ থেকে বিরত থাকা—মাথাব্যথা প্রতিরোধের জন্য জরুরি। এটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন:
ঘুম মস্তিষ্কের বিশ্রাম ও কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখার জন্য অপরিহার্য। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা মস্তিষ্কের জন্য ভালো।
ঘুমের সময় মস্তিষ্কের ক্ষতিকর প্রোটিনগুলো পরিষ্কার হয়, যা স্মৃতিভ্রংশ রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
মানসিক চাপ কমান:
অতিরিক্ত মানসিক চাপ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করা উচিত।
সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখুন:
বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা স্মৃতিভ্রংশ রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
নতুন কিছু শিখুন:
নতুন কিছু শেখা মস্তিষ্কের জন্য ভালো। গান বাজানো বা নতুন ভাষা শেখা মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের সক্রিয়তা বাড়ায়।
দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তির যত্ন নিন:
দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তির সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসা করানো উচিত। কারণ, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, যা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর।
মাথায় আঘাত থেকে বাঁচুন:
সাইকেল চালানোর সময় হেলমেট ব্যবহার করা উচিত। মাথায় আঘাত পেলে তা মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কিছুটা স্মৃতিভ্রংশ স্বাভাবিক:
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া স্বাভাবিক। উদ্বেগের কিছু নেই, তবে স্মৃতিশক্তির গুরুতর সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে জীবনযাত্রায় ছোট ছোট পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বজায় রাখার মাধ্যমে আমরা আমাদের স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তাকে সতেজ রাখতে পারি।
তথ্য সূত্র: The Guardian