আর্টিক অঞ্চলের উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা, জলবায়ু পরিবর্তনের এক অশনি সংকেত।
পৃথিবীর শীতলতম অঞ্চল, আর্কটিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে হওয়া এক নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এক উদ্বেগজনক তথ্য জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এই অঞ্চলের উদ্ভিদজগতের পরিবর্তন সম্ভবত একটি বৃহত্তর পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিচ্ছে, যা শুধু আর্কটিকে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এর প্রভাব পড়বে সারা বিশ্বে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আর্কটিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার পৃথিবীর অন্য অঞ্চলের তুলনায় চারগুণ বেশি।
প্রায় ৪০ বছর ধরে কানাডার সুমেরু অঞ্চল থেকে শুরু করে আলাস্কা এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ৪৫টি স্থানে দুই হাজারের বেশি উদ্ভিদের উপর নজর রাখেন ৫৪ জন গবেষক। তাঁদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সেখানকার উদ্ভিদ সম্প্রদায়ের মধ্যে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন হচ্ছে। কিছু অঞ্চলে ঝোপঝাড় ও ঘাসের পরিমাণ বাড়ছে, যেখানে ফুল গাছেরা টিকতে পারছে না। কারণ, লম্বা গাছপালা তাদের সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত করছে।
এডিনবারা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক মারিয়ানা গার্সিয়া ক্রিয়াদো, যিনি এই গবেষণার প্রধান ছিলেন, তিনি জানান, “আমরা আর্কটিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব দেখছি। অন্য অনেক অঞ্চলে আমরা নির্দিষ্ট কিছু প্রবণতা দেখতে পেলেও, আর্কটিক একটি বিশেষ স্থান, যেখানে অনেক কিছুই অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটছে।”
গবেষণায় দেখা গেছে, উষ্ণ অঞ্চলগুলোতে উদ্ভিদের বিভিন্নতা বেশি, আবার তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু উদ্ভিদের দ্রুত বৃদ্ধি ও কিছু প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটছে। উদাহরণস্বরূপ, কানাডার পশ্চিমাঞ্চলে উইলো জাতীয় ঝোপঝাড় দ্রুত বাড়ছে। এরা অন্যান্য ছোট গাছপালাগুলোকে ঢেকে দেওয়ায় সেখানকার পরিবেশের পরিবর্তন হচ্ছে।
এই পরিবর্তনের ফলে সেখানকার বাস্তুতন্ত্রে বসবাসকারী জীববৈচিত্র্যের উপরও প্রভাব পড়ছে। গবেষকরা বলছেন, এই পরিবর্তনগুলো সেখানকার কারibou-এর মতো প্রাণীদের খাদ্য এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার উপরও প্রভাব ফেলবে। কারণ, কারibou ঘাস ও লাইকেন জাতীয় উদ্ভিদ খেয়ে বাঁচে, যা ঝোপঝাড় বেড়ে যাওয়ায় কমে যাচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অধ্যাপক গ্রেগ হেনরি, যিনি এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহে সাহায্য করেছেন, জানান, গবেষকদের চরম আবহাওয়ার মধ্যে কাজ করতে হয়েছে, যেখানে ছিল তীব্র ঠাণ্ডা, পোকামাকড়ের উপদ্রব এবং এমনকি মেরু ভালুকের মতো প্রাণীর সঙ্গেও মোকাবিলা করতে হয়েছে।
গবেষকরা তাঁদের গবেষণায় শৈবাল এবং লাইকেনকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি, তবে তাঁরা মনে করেন বাস্তুতন্ত্রের জন্য এদেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
মারিয়ানা গার্সিয়া ক্রিয়াদো আরও বলেন, “আর্কটিকে আমরা যে পরিবর্তনগুলো দেখছি, তা শুধু এই অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর প্রভাব বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের এই পরিবর্তনগুলো বুঝতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কখন আসবে, সেটি এখন আর কোনো প্রশ্ন নয়, বরং বিষয়টি হলো, এটি কবে আসবে।”
আর্টিকের এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বাড়ছে, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করছে। তাই, আর্টিকে হওয়া পরিবর্তনগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
তথ্যসূত্র: The Guardian