মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের আস্থা সূচকে বড় ধরনের পতন দেখা দিয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এপ্রিল মাসে এই সূচকটি ৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫২.২-এ, যা ১৯৫২ সালের পর চতুর্থ সর্বনিম্ন।
দেশটির মানুষের মধ্যে আসন্ন মন্দা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে, যদিও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কয়েকটি দেশের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি স্থগিত করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো ভোক্তাদের ব্যয়। এই ব্যয়ের পরিমাণ কমে গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে, এমনকী মন্দা দেখা দিতে পারে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়স, শিক্ষা, আয় এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খারাপ ধারণা তৈরি হয়েছে। বাণিজ্য নীতি এবং ভবিষ্যতে মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে অনিশ্চয়তা এর প্রধান কারণ।
এই পরিস্থিতিতে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক (ফেড) সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। ফেডের কর্মকর্তারা বলছেন, ভোক্তাদের মধ্যে ব্যয়ের প্রবণতা কমে গেলে তারা ব্যবস্থা নেবেন। তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পদক্ষেপ নিতে পারেন, যা বিভিন্ন খাতে সুদের হার বাড়াতে পারে।
অতীতে, এমন খারাপ পরিস্থিতিতেও ভোক্তারা খরচ করা বন্ধ করেননি। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালের জুন মাসে যখন মূল্যস্ফীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তখনও মানুষজন কেনাকাটা চালিয়ে গিয়েছিল।
তবে, বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। একদিকে যেমন শ্রমিক বাজারের অবস্থা আগের মতো শক্তিশালী নয়, তেমনই ভোক্তাদের সঞ্চয়ও কমে এসেছে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের ঋণ পরিশোধের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এখনো পর্যন্ত অর্থনীতির ওপর সরাসরি আঘাত হানেনি, তবে এর প্রভাব কত দিন স্থায়ী হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে।
তবে, এর মাত্রা এবং সময়সীমা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক মন্দা বা দুর্বলতার আশঙ্কা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার।
দেশটির বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি হয়। যদি সেখানকার ভোক্তারা খরচ কমিয়ে দেয়, তবে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে তার প্রভাব পড়তে পারে।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অনেক বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। মন্দা দেখা দিলে তাদের চাকরি এবং দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সেও প্রভাব পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পরিবর্তন আসলেও তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে পারে।
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং তাদের পদক্ষেপের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
তাই, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির দিকে এখন বাংলাদেশেরও নজর রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন