মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা (আইআরএস)-এ কর্মী ছাঁটাই এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহারের ফলে কর নিরীক্ষণের (অডিট) ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এই পরিবর্তনের ফলে কিভাবে একজন সাধারণ আমেরিকান নাগরিকের কর পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা প্রভাবিত হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তবে এর কিছু প্রভাব বাংলাদেশের কর ব্যবস্থাপনার জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।
সাধারণত, আইআরএস-এর পক্ষ থেকে খুব কম সংখ্যক করদাতার হিসাব পরীক্ষা করা হয়। ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দাখিল করা রিটার্নের ১ শতাংশেরও কম নিরীক্ষণ করা হয়েছে।
এর কারণ ছিল মূলত, এই সংস্থার পর্যাপ্ত আর্থিক, জনবল ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাব। তবে, ‘ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে আইআরএস-এর কর্মপরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও, পরবর্তীতে এর কিছু অংশ বাতিল করা হয়।
আয়ের ভিন্নতার ওপর নির্ভর করে নিরীক্ষণের হারও ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, যাদের বার্ষিক আয় ১ কোটি মার্কিন ডলার বা তার বেশি, তাদের দাখিল করা রিটার্নের প্রায় ৮.৭ শতাংশ পরীক্ষা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, যাদের আয় ৫০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ মার্কিন ডলারের মধ্যে, তাদের ক্ষেত্রে নিরীক্ষণের হার ছিল ০.৫ শতাংশের কম। এছাড়া, কম আয়ের কিছু মানুষ, যারা ‘আর্নড ইনকাম ট্যাক্স ক্রেডিট’-এর সুবিধা পান, তাদের নিরীক্ষণের হার তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল, যা ২০১৩ সালে ১.৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
বর্তমানে আইআরএস-এ অস্থিরতা চলছে। কর্মী ছাঁটাই, অবসর এবং পদত্যাগসহ বিভিন্ন কারণে কয়েক মাসের মধ্যে হাজার হাজার কর্মচারী সংস্থাটি ছাড়তে পারেন।
এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অভিজ্ঞ কর্মীরাও রয়েছেন, যাদের কর প্রশাসন সম্পর্কে ভালো ধারণা ছিল। একই সময়ে, সরকার এই সংস্থায় আধুনিকীকরণের জন্য এআই-এর ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কর্মী কমানো এবং এআই-এর উপর বেশি নির্ভরতা নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। কারণ, এর ফলে করদাতাদের অধিকার রক্ষা করা কঠিন হবে এবং রাজস্ব আদায়েও প্রভাব পড়তে পারে।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেছেন, তারা বর্তমানে আইআরএস-কে আমেরিকান পরিবারগুলোর জন্য আরও ভালোভাবে কাজ করতে এবং উন্নত পরিষেবা প্রদানের চেষ্টা করছেন।
তবে, কর্মী সংকট এবং এআই-এর উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা গ্রাহক পরিষেবা এবং তথ্যের নির্ভুলতাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে মানুষের তত্ত্বাবধানের বিকল্প নেই। যদি এআই-এর উপর অতিরিক্ত নির্ভর করা হয়, তবে তা ভুল হিসাব দিতে পারে, যা করদাতাদের জন্য সমস্যা তৈরি করবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে। আমাদের দেশেও কর ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
এই ক্ষেত্রে, এআই-এর ব্যবহারের পাশাপাশি, দক্ষ জনবল এবং করদাতাদের অধিকার রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া, তথ্যের সঠিকতা এবং গ্রাহক পরিষেবার মান উন্নত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন