হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিন বিষয়ক আলোচনা: মুক্ত চিন্তার নামে কি ভিন্নমত দমন?
যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিন বিষয়ক আলোচনা ও গবেষণা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মুক্ত চিন্তার কথা বললেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে কথা বলা বন্ধ করে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মুসলিম ও আরব শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ভীতি।
জানা গেছে, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ তাদের নীতিমালায় মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বললেও, ফিলিস্তিন ইস্যুতে ভিন্নমত পোষণকারীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে। এর কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী কিছু অর্থ যোগানদাতার চাপকে দায়ী করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বললে তাদের পেশাগত জীবন ও অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
২০২৫ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট টাস্কফোর্স অন কমব্যাটিং অ্যান্টি-মুসলিম, অ্যান্টি-আরব, অ্যান্ড অ্যান্টি-ফিলিস্তিনি বায়াস এর পক্ষ থেকে বলা হয়, মুসলিম, আরব শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে গভীর ভীতি কাজ করে। ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ক্যাম্পাসের পরিবেশ অনিশ্চয়তা, একাকীত্ব ও ভয়ের জন্ম দিয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া মুসলিম শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেক শারীরিক নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক তাদের ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করলে পেশাগত বা একাডেমিক ক্ষেত্রে ক্ষতির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের এই নীরবতা ও দমন নীতির কড়া সমালোচনা করেছেন অনেকে। তাদের মতে, একদিকে যখন ইসরায়েলি হামলায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন, তখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন আচরণ হতাশাজনক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ শিক্ষাঙ্গনে ভিন্নমতের কণ্ঠরোধের একটি উদাহরণ। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানানো এবং তাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলার সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলেও, তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের ফলে ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে আলোচনা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে, যা মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা