সুমাত্রা দ্বীপের মতো সুন্দর, কিন্তু কোলাহলমুক্ত সমুদ্র সৈকত: বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সিসিলির অনাবিল আকর্ষণ।
ভূমধ্যসাগরের বুকে অবস্থিত, ইতালির বৃহত্তম দ্বীপ সিসিলি। একদিকে এর সবুজ পাহাড়, অন্য দিকে নীল সমুদ্র। ইউরোপের এই দ্বীপটি তার ঐতিহাসিক স্থাপত্য, মুখরোচক খাবার, এবং মনোরম দৃশ্যের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তবে, সিসিলির একটি বিশেষ দিক আছে যা অনেকের কাছে এখনো অজানা – এখানকার শান্ত, জনমানবশূন্য সমুদ্র সৈকতগুলো।
যেখানে গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে যাওয়া পর্যটকদের ভিড় নেই, আছে নির্মল শান্তি আর প্রকৃতির অকৃত্রিম রূপ। আজকের লেখায় আমরা তেমনই একটি জায়গার গল্প শোনাবো, যা বাংলাদেশের ভ্রমণ প্রেমীদের মন জয় করে নিতে পারে সহজেই।
সিসিলির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে, মেনফি (Menfi) নামক একটি ছোট শহর অবস্থিত। মেনফির আশেপাশে রয়েছে অসাধারণ কিছু সমুদ্র সৈকত, যেমন – লে সোলেট (Le Solette), লিডো ফিয়োরি (Lido Fiori), এবং পোরতো পালো (Porto Palo)। এখানকার সমুদ্রগুলো এতটাই শান্ত যে মনে হবে যেন কোনো লুকানো স্বর্গ।
সোনালী বালি, স্বচ্ছ নীল জল – যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি। গ্রীষ্মকালে যখন ইতালির অন্যান্য সৈকতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকে, মেনফির সৈকতগুলো তখনও থাকে শান্ত আর নিরিবিলি।
এখানে সমুদ্রের ধারে বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি আরও অনেক কিছু করার আছে। মেনফির কাছেই রয়েছে আঙুর বাগান আর জলপাই ক্ষেত। স্থানীয় বাজারে তাজা সবজি, ফল, এবং বিভিন্ন ধরনের পনির পাওয়া যায়। মেনফি শহর থেকে কাছেই রয়েছে প্রাচীন গ্রিক শহর সেলিনুন্তের (Selinunte) ধ্বংসাবশেষ।
যারা ইতিহাস ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। এখানকার মন্দিরের ধ্বংসাবশেষগুলো প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এবার আসা যাক, কিভাবে একজন বাংলাদেশি পর্যটক মেনফিতে তাদের ভ্রমণকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে পারে। প্রথমত, ভিসা (Visa) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইতালি যেতে হলে অবশ্যই শেনজেন ভিসা (Schengen visa) প্রয়োজন হবে। এই ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যায়।
মেনফিতে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিকল্প রয়েছে। ভিলা মেলোগ্রানো (Villa Melograno)-এর মতো ভিলাগুলোতে পরিবার নিয়ে থাকার সুযোগ আছে। এছাড়াও, বাজেট অনুযায়ী হোটেল এবং গেস্ট হাউজ তো রয়েছেই।
খরচের হিসাবটাও জেনে রাখা ভালো। মেনফিতে একটি সুন্দর ভিলা ভাড়া করতে সাধারণত প্রতি সপ্তাহে ১,২৩০ ইউরো (প্রায় ১,৪৬,০০০ টাকা) থেকে শুরু হয়। মেনফির স্থানীয় বাজারে খাবারের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম। একটি ভালো রেস্টুরেন্টে দুজনের খাবার খরচ হতে পারে প্রায় ৫০-৬০ ইউরো (প্রায় ৬,০০০-৭,২০০ টাকা)।
সবশেষে, মেনফির সমুদ্র সৈকতগুলো বাংলাদেশের ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে। কোলাহলমুক্ত পরিবেশে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করা, স্থানীয় সংস্কৃতি ও খাবারের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, এবং ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার এক দারুণ সুযোগ রয়েছে এখানে।
তাই, যারা প্রকৃতির কাছাকাছি, শান্ত ও সুন্দর একটি ছুটি কাটাতে চান, তাদের জন্য সিসিলির মেনফি হতে পারে একটি আদর্শ স্থান।
তথ্য সূত্র: The Guardian