শিরোনাম: ব্রিটেনের মাটিতে জন্ম নিচ্ছে নতুন ধরনের শিম: বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষিতে এর প্রভাব
শতবর্ষ পুরনো ধারণা বদলে দিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন খাদ্যশস্য উৎপাদনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছেন। ব্রিটেনের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরিক হোলুবের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী শিমের তিনটি নতুন জাত তৈরি করেছেন, যা যুক্তরাজ্যের আবহাওয়ায় চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত।
খবরটি শুধু ব্রিটেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষিতে উন্নয়নকামী যেকোনো দেশের জন্যই এটি একটি শিক্ষণীয় বিষয়।
এই নতুন শিমগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে— ‘অলিভিয়া’, ‘গডivaভা’ এবং ‘ক্যাপুলেট’। এদের বিশেষত্ব হলো— এরা দ্রুত বাড়ে, ঠান্ডায় টিকে থাকতে পারে এবং শক্তিশালী শিকড় তৈরি করতে সক্ষম।
মে মাসে রোপণ করে সেপ্টেম্বর মাসেই ফসল তোলার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে এই শিমগুলো। এছাড়া, এই শিমগুলো কম্বাইন হার্ভেস্টারের মাধ্যমে সহজেই কাটারও ব্যবস্থা রয়েছে।
অধ্যাপক হোলুব জানিয়েছেন, এই শিমগুলো তৈরি করতে তারা প্রচলিত প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, যা শত শত বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে।
তাদের মূল লক্ষ্য ছিল— উন্নত মানের শিম উৎপাদন করা।
ওয়ারউইকশায়ারের ‘নিউট্রাল ফুড’ নামক একটি উদ্যোগ স্থানীয় কৃষক, খাদ্য বিক্রেতা এবং শিম উৎপাদনকারীদের একত্রিত করেছে।
এখানকার ‘জিরো স্টোর’-এ ইতিমধ্যে এই শিম বিক্রি শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা বাড়ছে, যা খাদ্য উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
বর্তমানে, ব্রিটেনে প্রায় ২৩.৪ শতাংশ মানুষ ফ্লেক্সিটোরিয়ান— অর্থাৎ, যারা মাঝে মাঝে মাংস খান এবং মূলত সবজি ও শস্যের ওপর নির্ভরশীল।
মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাবার এবং স্থানীয় উৎস থেকে খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। শিমের পুষ্টিগুণ এবং খাদ্যগুণ সম্পর্কে সচেতনতাও বেড়েছে, যা এই নতুন জাতের শিমের জন্য একটি ইতিবাচক দিক।
এই প্রকল্পের সাফল্যের পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল— স্বল্প সরবরাহ শৃঙ্খল বজায় রাখা।
অধ্যাপক হোলুব বলেন, “মাঝখানে অন্য কোনো পক্ষ যুক্ত হলে তা ভোক্তার জন্য খরচ বাড়ায় এবং কৃষকের লাভের পরিমাণ কমে যায়।”
তাহলে, এই শিমগুলো কি স্বাদেও দারুণ? যারা খেয়েছেন, তাদের মতে, ‘অলিভিয়া’ এবং ‘গডিভা’র মিশ্রণ একটি বিশেষ স্বাদ তৈরি করে, যা রান্নায় ভিন্নতা যোগ করে।
এই উদ্ভাবন শুধু ব্রিটেনের জন্য নয়, বাংলাদেশের কৃষিখাত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
আমাদের দেশেও বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ফসলের উন্নত জাত তৈরির চেষ্টা করছেন। স্থানীয় আবহাওয়া ও মাটির উপযোগী শস্য উৎপাদনে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।
এর মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয় কৃষকদের ক্ষমতায়ন করা সম্ভব, যা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া, শিমের মতো পুষ্টিকর খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্য আনা যেতে পারে।
সুতরাং, যুক্তরাজ্যের এই নতুন শিম উদ্ভাবন বাংলাদেশের জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে।
স্থানীয় পর্যায়ে গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষকদের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান